রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার পরে অবস্থান নেয় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
মেরুল বাড্ডা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে যায়। বাইরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি দোকানপাট, স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে আন্দোলনকারীদের দিকে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন।
চলমান কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে চলছে 'কমপ্লিট শাটডাউন'। কমপ্লিট শাটডাউনের অংশ হিসেবে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে আন্দোলন করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় কয়েকশ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করতে গেলে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। যার কারণে বন্ধ রয়েছে মেরুল বাড্ডা এলাকায় যানচলাচল। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকশ শিক্ষার্থী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তা অবরোধ করে নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। ব্র্যাকের শিক্ষার্থীদের অবরোধের এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় প্রথমবার শিক্ষার্থীরা পিছু হটলেও পরে তারাও পুলিশের দিকে তেড়ে আসেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ফাটায়।
বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভেতরে অবস্থান করছেন। এদিকে, বেলা ১১টা থেকে যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া ও রায়েরবাগ এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সড়কে অবস্থান নেয় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ সময় যাত্রাবাড়ী থানার সামনে দুই যুবকের পায়ে গুলি করে র্যাব। বেলা ১১টা বাজতেই নেমে আসে সাধারণ শিক্ষার্থী স্থানীয় এলাকার জনগণ। এ সময় আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নিতে গেলে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা পিছু না হটে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
এদিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে অনেক পুলিশ দেখা গেছে। সেখানে পুলিশের সাঁজোয়া যান রাখা রয়েছে। মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে ১০ নম্বরের গোলচত্বর পর্যন্ত বেশির ভাগ মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় যানবাহন ও লোকজনের চলাচল খুবই কম।
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ আজ কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) পালন করছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এই কর্মসূচি চলাকালে শুধু হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। গতকাল বুধবার ছুটির দিনেও ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রবিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাতে শনির আখড়ার কাজলা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত ২০টি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুঁড়ি ও ইট ছড়িয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন