শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক ‘সমর্থন হারিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) বুঝে গেছেন আন্তর্জাতিক মহল তাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশের মানুষেরও সমর্থন নেই তাদের। দেশি-বিদেশি সবাই বলছে সরকারকে এখনই চলে যেতে হবে।

শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। পরিষ্কার কথা- এই দেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।’ নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রাখতে সরকার আবারো নীল নকশা করছে’ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার কথা বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে, তবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে তাতে অংশগ্রহণ করবে। আর বিএনপি ছাড়া এদেশে আর কোনো ভোট হবে না, হতে দেওয়া হবে না।’

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বাড্ডায় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত পদযাত্রাপূর্বক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিদ্যুতের লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে’ এ পদযাত্রা হয়। বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে মালিবাগ আবুল হোটেলের মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা হয়। এতে শ্রমিক দলের হাজারও নেতাকর্মী অংশ নেন।

এ কর্মসূচির কারণে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়, ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা জনগণের ভোটের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে, শ্রমিকদের বাঁচার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এর মধ্যে আবার প্রধানমন্ত্রী এমন কথা বলছেন, যা দেশকে বিপদে ফেলছে।

তিনি বলছেন- যুক্তরাষ্ট্র তাকে সরাতে চায়। কিন্তু এ ধরনের কথা একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেউ আশা করেনি। তার মানে তিনি বুঝে গেছেন, আন্তর্জাতিক সিষ্টেম তার পক্ষে নেই। বাংলাদেশেও তার সমর্থন নাই। কারণ বাংলাদেশের মানুষ একটাই কথা বলছে, আপনি এই মুহূর্তে চলে যান।

আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোকালেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, আগামীতেও হবে না’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘তারা বলে তাদের সময় নাকি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই সরকারের কোনোকালেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না।

তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আবার নির্বাচনের কথা বলে। এরা আবারো যেনতেন ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। নির্বাচন এখন সরকারের খেলায় পরিণত হয়েছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে সরকার, তারা ব্যাংক লুট করে নিয়েছে, অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্য খাতসহ সবই আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। এরা গায়ের জোরে কথা বলে।

প্রতিবাদ করলে হামলা মামলা এমনকি গুম হয়ে যেতে হয়। পুলিশের কাছে ন্যায়বিচার নিয়ে মামলা করতে গেলে উল্টো মামলায় জড়ানো হয়। সব জায়গায় অনিয়ম।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার জনগণের আন্দোলনকে ভয় পায় বলেই নেতাদেরকে আটকে রেখেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে দিনের পর দিন আটকে রেখেছে। জামিন দেওয়া হচ্ছে না। যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নাকে আটকে রেখেছে। আরও অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকে রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যিনি এদেশে গণতন্ত্রের মাতা তাকে অসুস্থ অবস্থায় আটক করে রাখা হয়েছে।’

ক্ষমতাসীনদের ‘দখলদার সরকার’ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারা জোর করে ক্ষমতায় বসে দেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ কর্মজীবী মানুষের তা কিছুতেই কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’

শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব বদরুল আলম ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব কামরুল জামানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ উজ জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন, যুবদলের মামুন হাসান প্রমুখ।

এছাড়াও পদযাত্রায় অংশ নেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কামরুজ্জামান রতন, মহানগর উত্তর বিএনপির আমিনুল হক, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password