চীনে যাচ্ছে গ্রামীণ নারীদের তৈরি ‘হেয়ার ক্যাপ’

চীনে যাচ্ছে গ্রামীণ নারীদের তৈরি ‘হেয়ার ক্যাপ’

বেকার নারীরা পরচুল বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরি করে দিন দিন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। শুধু তাই নয় এ গ্রামের তৈরি করা এসব ‘হেয়ার ক্যাপ’ চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। টাক মাথা’র জন্য ব্যবহার করা এসব পরচুল তৈরি করে গ্রামের শতাধিক হত দরিদ্র নারী ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী প্রতিমাসে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করছেন।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়নের মতিহারা, ভাদুরিয়া, ঘোড়াঘেটের রানীগঞ্জ এলাকায় মো. তারেক হোসেন তার দুই বন্ধু মেসার্স সায়মা হেয়ার এন্টারপ্রাইজ উইকড তৈরি করেন হেয়ার ক্যাম্প। এলাকার শত শত বেকার শিক্ষিত নারীরা খুঁজে পায় বাড়তি আয়সহ নতুন কর্মসংস্থানের।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন হেয়ার ক্যাপ তৈরির প্রশিক্ষণ চলছে। তাদের তৈরি করা হেয়ার ক্যাপ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

উপজেলার ভাদুরিয়া ইউনিয়নের (প্রাক্তন ইউপি সদস্য) মো. রাজু আহম্মেদ জানান, এ শিল্প এলাকায় আসার কারণে শিক্ষিত বেকার নারীরা বাড়তি আয় করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ঢাকায় ওই কারখানার মালিকেরা চুক্তিভিত্তিক প্রথম পর্যায়ে সামান্য কিছু চুল, সুই-সুতাসহ হেয়ার ক্যাপ তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে এসে গ্রামের হতদরিদ্র ২০ জন নারীকে ট্রেনিং দিয়ে পরচুল তৈরির কাজে লাগিয়ে দেন।

এরপর তারেক হোসেনকে আর পেছন ফিরতে হয়নি। বিশেষ ধরনের টেবিল তৈরি করে তিনি বাড়িতেই একটি মিনি কারখানা গড়ে তুলেন। এখন তার কারখানায় ৭৫ জন নারী কাজ করছেন। এছাড়া নিজেদের সুবিধার জন্য অনেক নারী তাদের বাড়িতেই পরচুল তৈরি করে তালেবের কাছে পৌঁছে দেন।

কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে তিনি ৭টি সাইজের তৈরি করা প্রায় ২শ’ থেকে আড়াইশ পরচুল সরবরাহ করেন। যার বাজার মূল্য দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। একজন দক্ষ নারী শ্রমিক দুইদিনে একটি করে পরচুল তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি পরচুলের মজুরী সাইজ অনুযায়ী ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা ।

মতিহারা গ্রামের হেয়ার ক্যাপ প্রশিক্ষণ কর্মশালার ম্যানেজার আজমত আলী জানান, প্রথমে নিজের সংসারের কথা চিন্তা করে হেয়ার ক্যাপ বা পরচুল তৈরির কাজ নিয়ে আসলেও বর্তমানে গ্রামের অনেক শিক্ষিত ও বেকার নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছে পরচুল তৈরির কাজ করতে।

বর্তমানে আমার কারখানায় ৭৫ জন নারী এবং গ্রামের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে আরো প্রায় ৫০ জন নারী নিজেদের সংসারের কাজের ফাঁকে পরচুল তৈরি করে আমার কাছে সরবরাহ করছে। এসব পরচুল তৈরির জন্য চুল ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আমাকে ঢাকা থেকেই সরবরাহ করা হয়। মাস শেষে ঢাকায় গিয়ে মজুরীর টাকা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে নিয়ে এসে সকলকে নগদে পরিশোধ করি। এ কাজের জন্য সরকারের কোন সহযোগিতা পেলে আমার কারখানা আরো বড় করা সম্ভব হতো।

এতে গ্রামের আরো অনেক হত দরিদ্র নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো। বর্তমানে দিনাজপুরের ৩ উপজেলায় ৫ হাজার বেকার নারী এ কর্মসংস্থানে যোগ দিয়ে ঘুচিয়েছে পরিবারের আর্থিক দৈন্যদশা।

পুটিমারা ইউপি চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার হোসেন জানান, এ শিল্প বড় আকারে কাজ করতে পারলে গড়ে উঠতে পারে শিল্প কারখানা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password