ফলিক এসিড হলো এক ধরণের ভিটামিন বি (Vitamin B). এটি ভিটামিন বি৯ (Vitamin B9) এর অন্তর্ভুক্ত। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন রকমের জটিলতা, শিশু বিকলাঙ্গতার হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই এসিডের ব্যাপক ব্যবহার আছে। অনেক খাবারেই এটি পাওয়া যায়, আবার অনেক ক্ষেত্রে নানা রকমের খাবারে এই উপাদান আলাদা করে যুক্ত করা হয়। ফলিক এসিড ভিটামিন বি৯ এর আরও একটি ধরণ- ফলেটের (Folate) সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং দুইটির অভাবেই ফলেট ডেফিসিয়েন্সি (Folate Deficiency) হয়ে থাকে।
১) ফলিক এসিড কি? ফলিক এসিড ফলেট (Folate) নামেও পরিচিত। শরীরের প্রত্যেকটি কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং গঠনের জন্য এ ভিটামিন প্রয়োজন। এটি আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে যা শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড অত্যন্ত জরুরি। লোহিত রক্তকণিকা তৈরির কাজে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে এই ভিটামিন শিশু ও পূর্ণ বয়স্ক উভয়েরই প্রয়োজন।
২) গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড কেন দরকার? গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (NTD) যেমন- স্পাইনাল কর্ড (Spina Bifida) ও ব্রেইনের (anencephaly) জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩) কতটুকু ফলিক এসিড দরকার? নিউরাল টিউব ডিফক্ট এর ঝুঁকি কমাতে বিশেষজ্ঞরা সাধারনত গর্ভধারণের অন্তত একমাস আগে থেকে দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (mcg) ফলিক এসিড গ্রহনের পরামর্শ দেন। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ গর্ভবতী হলে ফলিক এসিড গ্রহনের পরিমান দৈনিক ৬০০ মাইক্রোগ্রাম করার কথা বলে থাকেন।বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কখনোই দৈনিক ১০০০ মাইক্রোগ্রামের বেশী ফলিক এসিড গ্রহন করা উচিত নয়।
৪) কিভাবে ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করা যায়? ফলিক এসিডের প্রাকৃতিক উৎসগুলো হোল- যেমন- মসুরডাল, মুগ ডাল, মাষকালাই ডাল, বুটের ডাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে।
সবুজ শাক-সবজিঃ সবুজ শাক সবজিতে, যেমন- পুঁইশাক, পাটশাক, মুলাশাক, সরিষা শাক, মটরশুঁটি, শিম, বরবটি, বাঁধাকপি, গাজর ইত্যাদিতে প্রচুর খাদ্য উপাদান রয়েছে যা একজন মায়ের শরীরে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেমন এক থেকে দুই কাপ সবজিতে উপাদান ভেদে ৫০ থেকে ৯০ মাইক্রোগ্রামের মতো ফলিক এসিড পাওয়া যায়।
কমলা বা টক জাতীয় ফলঃ একটি বড় কমলা ৫৫ মাইক্রোগ্রামের মতো ফলিক এসিড বহন করে। আবার কমলার রসেও প্রচুর পরিমাণে উপাদানটি পাওয়া যায়।
ব্রোকলিঃ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ ব্রোকলির প্রত্যেক আধা কাপে ১০৪ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড থাকে যা প্রত্যেক দিনের ফলিক এসিড চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ।
শস্যদানাঃ বিভিন্ন রকমের শস্যদানা ও শস্যদানা দিয়ে প্রস্তুত খাবারে ফলিক এসিড প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকম শস্য দিয়ে তৈরী রুটি, পিঠা এক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
৫) ফলিক এসিডের কোন সাইড এফেক্ট আছে? ফলিক এসিডের কোন সাইড এফেক্ট পাওয়া যায়নি। যেহেতু ফলিক এসিড পানিতে দ্রবণীয় তাই এটি শরীরে সঞ্চিত থাকে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা ফলিক এসিড প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। তবে নিয়মিত অতিরিক্ত ফলিক এসিড গ্রহন করা কোনভাবেই উচিত নয়।
৬) অন্য ওষুধের সাথে ফলিক এসিড নেয়া যায়? ফলিক এসিড নেয়ার আগে ও পরে অন্তত দুঘণ্টা এন্টাসিড জাতীয়া ওষুধ না খাওয়ায় ভালো কারণ এতে শরীরের ফলিক এসিড শোষণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। অন্য কোন মাল্টিভিটামিন খেলে বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে নিন। কারণ আপনার মাল্টিভিটামিনেই প্রয়োজনীয় ফলিক এসিড থাকতে পারে।
৭) ফলিক এসিডের অভাব কিভাবে বোঝা যায়? এর উপসর্গগুলো বেশ সুক্ষ্ম। সম্ভবত এসময় আপনার ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া, দূর্বলতা, জিহ্বায় ব্যাথা, বুক ধরফড় করা ও বিরক্তিবোধ হতে পারে। লক্ষন থাকুক আর নাই থাকুক গর্ভাবস্থায় বা গর্ভধারণের আগে অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে নিয়মিত ফলিক এসিড গ্রহন করতে হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন