মনকে সুস্থ রাখে দরকার সৌন্দর্যের সাধনা। ঘরে ফুল থাকলে তা যে কেবল নান্দনিক আবেদন বাড়ায়, সেটা নয়। এর চেয়ে বড় কিছু করে। অনেক প্রাচীন রীতি বদলে গেছে আধুনিক সময়ে। কিন্তু ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদনের পুরোনো সেই রীতি এখনো বদলে যায়নি। ফুল দিয়ে মালা গেঁথে পরা বা খোঁপায় ফুল গুঁজে দেওয়া নারী-পুরুষের সম্পর্কে আবেগ আনে ঘনিষ্ঠ হওয়ার। মানুষ সপ্তাহে একবার মানসিক চাপ অনুভব করে ৬৮ শতাংশ আর এক দিন পর পর অনুভব করে। মানসিক চাপ বেশি হয় নারীদের। অনেকে সেই চাপ দিনে কয়েক বারও অনুভব করতে পারে ৩২ শতাংশ যা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে। গবেষকেরা ১৮ থেকে ৬০ বছরের ১৪০ জন নারীর ওপর একটি পরীক্ষা চালান। এই পরীক্ষায় কিছু নারীকে দেওয়া হয় আকর্ষণীয় মোমবাতি, কিছু নারীকে দেওয়া হয় তাজা ফুল। পরীক্ষার পর দেখা যায়, অন্যদের চেয়ে যাঁরা ফুল পেয়েছিলেন, তাঁদের মানসিক চাপ কমেছে অনেক বেশি। মন মেজাজ হয়েছে চনমনে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ফুলের সংস্পর্শে এলে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটে। তাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে মনে। শীত মৌসুমের কয়েক টি ফুল যেমন:-
সূর্যমুখী: শীতকালীন ফুল। এটি দেখতে সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকার জন্য এর নাম সূর্যমুখী। এর বীজ হাঁস, মুরগী খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবী বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাষ হয়। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেলের তুলনায় ভালো। এই গাছ ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চন্দ্রমল্লিকা: ফুল শীতকালে ফোটে এবং বিভিন্ন রঙের হতে পারে। এটি উদ্যান এবং ঘরের শোভা বাড়ায়। চন্দ্রমল্লিকা ফুলের আদি নিবাস এশিয়া ও ইউরোপে। অনেক রঙের হতে পারে যেমন সাদা, হলুদ, গোলাপি। চন্দ্রমল্লিকার বৈশিষ্ট্য হলো এর পাপড়িগুলো বেশ ঘন এবং দীর্ঘস্থায়ী। এই ফুল উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং পূজায় এর ব্যবহার প্রচলিত। এর সুগন্ধ মনোমুগ্ধকর এবং আকর্ষণীয়। সহজ পরিচর্যায় এটি বাড়ির বাগানেও ফোটানো যায়। চন্দ্র মল্লিকা, প্রায়ই "মম" হিসাবে উল্লেখ করা হয় শুধু সাধারণ ফুল নয়; তারা তাদের প্রাণবন্ত রং, জটিল পাপড়ি এবং সমৃদ্ধ প্রতীকের জন্য সম্মানিত।
রজনিগন্ধা: যা “নিশিগন্ধা’’ ও “তরোয়াল লিলি’’ নামেও পরিচিত। এটি একটি ভেষজ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যার ডাঁটার দৈর্ঘ্য ৭৫-১০০ সেমি হয়ে থাকে। এই ডাঁটার চারিপাশে সাদা রঙের ১০-২০ টি করে ফানেল আকৃতির ফুল বহন করে। এই ফুল দিয়ে নানা ঢঙের ফুলের তোড়া বানানো হয় এর মনোমুগ্ধকর আকৃতি এবং মিষ্টি সুগন্ধের জন্যে। আলগা ফুলগুলো বেণি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। রজনিগন্ধা টব এবং বাগানে বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত এবং এর থেকে ভাল সুগন্ধী তেল উত্তোলন করা যায়।
গাঁদা ফুল: নানাবিধ উৎসব, অনুষ্ঠান ও মালা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।বাংলাদেশে গাঁদা ফুল খুবই জনপ্রিয়। এর চাষ সহজ। এ ফুল উদ্যানে, পার্কে, টবে বারান্দায় চাষ করা যায়। ফুলটি নানাবিধ উৎসব, অনুষ্ঠান, গৃহসজ্জা, মালা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফুলটির রং, গঠন বৈচিত্র্য ও কোমলতা সকল শ্রেণির মানুষকে আকৃষ্ট করে। গাঁদা ফুলের পাতার রস শরীরের ক্ষত স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
গোলাপ: ফুলের রানি বলা হয়। গোলাপ পাপড়ির গড়ন ও বিন্যাসের নান্দনিকতা মানুষকে আকৃষ্ট করে। সুগন্ধী গোলাপের ঘ্রাণও মানুষের ভালোবাসার কারণ। ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাসের জন্য গোলাপ বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। গোলাপের রয়েছে আকারের ভিন্নতা, সেই সাথে আছে রং এর ভিন্নতাও। গোলাপি, লাল, হলুদ, সাদা, সবুজ ও কালো গোলাপ দেখা যায়। তাছাড়া "গার্ডেন রোজ" নামে বিভিন্ন হাইব্রিড গোলাপেরও উৎপাদন হচ্ছে। যেগুলো একই সাথে একই ফুলের পাপড়িতে দুই বা ততোধিক রঙের হতে পারে। গোলাপ ফুল বিবাহ বাড়িতে এবং ভ্যালেনটাইন ডে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ফুল দ্বারা কোনো সম্মানীয় ব্যক্তিকে বরণ করে নেওয়া হয়। এই ফুলের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রতীকী মূল্য এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্য, গোলাপ প্রতিটি হৃদয় এবং বাগানের রাজকীয় রানি।
ফুল চাষ বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা প্রসার লাভ করেছে। যেখান থেকে মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। ফুল শুভেচ্ছা বার্তা বহন করে। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিবাহ এবং ঘর সাজানো ফুলের ব্যবহার বিস্তার লাভ করে থাকে। ফুলের ব্যবহার এখন সর্বত্র, রমণীর খোঁপা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতার গলা পর্যন্ত। ফুল নিয়ে মহানবী (সা.)-এর একটি বিখ্যাত হাদিসের এমন কাব্যরূপ দিয়েছেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন