আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে একটি নীরব বিপ্লব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এটি এখন আর শুধু কল্পগল্পের ফ্যান্টাসি নয়, বাস্তবে মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী। এআইয়ের কারণে মানুষ ভবিষ্যতে চাকরি হারাবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। কেউ কেউ মনে করেন, এআই মানুষের প্রতিদ্বন্দী নয়, বরং সহযোগী হবে। আবার অনেকের মতে, এআই অল্পদিনের মধ্যে এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে যে মানুষ চাকরি হারাতে বাধ্য হবে।
এদিকে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে পাঁচটি পেশা এআই দখল করে নেবে। এটা কিন্তু শুধু ভবিষ্যদ্বাণী নয়, ইতিমধ্যে বাস্তব হতে চলেছে। চলুন সেই পেশাগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
১. আইনের মারপ্যাচ এখন রোবটের নখদর্পণে
একসময় চুক্তিপত্র পর্যালোচনার জন্য আইনজীবীরা ঘণ্টায় ৫০-৬০ হাজার টাকা নিতেন। তবে সেই দিন এখন অতীত। এআই এখন মানুষের চেয়ে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে চুক্তিপত্র পর্যালোচনা করতে পারে।
২. হিসাবের খাতা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে মানুষ
আপনার কাজ যদি হয় স্প্রেডশিট বা হিসাব মেলানো, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা আছে। মাইন্ডব্রিজ এবং অ্যাপজেনের মতো এআই অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার এখন জালিয়াতি শনাক্ত করতে পারে, বিল প্রসেসিং করতে পারে, এমনকি আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে। আর এসব কাজ করতে পারে যেকোনো মানুষের চেয়ে দ্রুত।
৩. স্বাস্থ্যসেবার কাজে বিপ্লব
চিকিৎসক এবং নার্সরা চাকরিতে নিরাপদ থাকলেও স্বাস্থ্যসেবার বিশাল প্রশাসনিক কর্মীবাহিনী এআইয়ের কাছে দ্রুত চাকরি হারাবে। মেডিকেল কোডার, ইন্স্যুরেন্স ক্লেইম প্রসেসর, ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের, রোগীর তথ্য প্রবেশ—এসব কাজ এআইয়ের সাহায্যে আরও দ্রুত করা যাবে।
৪. কল সেন্টারে কথা বলবে যন্ত্র শিগগিরিই কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধিরা চাকরি হারাবেন। এআই চ্যাটবট এবং ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো এখন মানুষের সহায়তা ছাড়াই ৮০ শতাংশ গ্রাহককে সাহায্য করছে। এগুলো কখনো বিরক্ত হয় না, অসুস্থ হয়ে ছুটি নেয় না এবং হাজার হাজার গ্রাহককে একসঙ্গে সাহায্য করতে পারে। তাই ভবিষ্যতে হয়তো আপনি কল সেন্টারে কল করলে মানুষের পরিবর্তে কোনো যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলবেন। সেই যন্ত্র মানুষের চেয়ে জ্ঞানী না হলেও বেশি ধৈর্যশীল হবে।
৫. কলম চলে যেতে পারে এআইয়ের হাতে
কন্টেন্ট তৈরি এবং ডেটা ব্যবস্থাপনার মতো কাজগুলোকে একসময় মানুষের নিজস্ব জগৎ বলে মনে হতো। কিন্তু চ্যাটজিপিটি বা জেমিনির মতো এআই মডেলগুলো সেই ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করেছে। মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত এআই কন্টেন্ট তৈরি করে দিতে পারে। তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরিতেও এআই বেশ পটু।
এআইয়ের কখনো রাইটার্স ব্লক হয় না। প্রতিবেদন তৈরি করতেও লাগে না বাড়তি সময়। ১০ জন মানুষ প্রতিদিন যে প্রতিবেদন বা কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে, এই তা করতে পারে কয়েক মিনিট বা ঘণ্টার মধ্যে। মানুষের বেতনের চেয়ে এআইয়ের খরচও অনেক কম। তাই ভবিষ্যতে লেখক, সম্পাদক, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ডেটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট এমনকি বেসিক গ্রাফিক ডিজাইনারদেরও চাকরি হারানোর ঝুঁকি আছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন