কাজের চাপ সইতে না পেরে নিজের জীবন শেষ করলো রোবট

কাজের চাপ সইতে না পেরে নিজের জীবন শেষ করলো রোবট

এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিঁড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করার পর 'রোবট আত্মহত্যার' বিষয়টি তদন্ত করছে। অতিরিক্ত কাজের চাপ সইতে না পেরে অনেকে কর্মস্থল পরিবর্তন করেন, অনেকেই আবার পুরো চাকরি জীবনকে বিদায় জানান। কিন্তু কাজের অসহ্য চাপের যন্ত্রনায় পুরো দুনিয়াকেই বিদায় জানায় কয়জন? তাও আবার মানুষ নয় একটি রোবট!

অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমন ঘটনা ঘটেছে দক্ষিন কোরিয়ায়। দক্ষিণ কোরিয়ার গামি সিটি কাউন্সিলে সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে কাজ করতো রোবট সুপারভাইজার। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকেই এটি কাজ করছিল। অফিসে নথি সরবরাহ, দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাঝে তথ্য প্রদান এবং প্রচারণায় অংশ নেয়ার মতো দৈনন্দিন কাজগুলোতে অংশ নিত এটি।

সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা কাজ করতো রোবটটি। এমনকি একজন মানুষ কর্মচারীর মতো এটিকে নিজস্ব নাগরিক সেবা কর্মকর্তার পরিচয়পত্রও দেয়া হয়েছিল। অন্য রোবটগুলো যেকোনো এক তলায় কাজ করলেও এই রোবট নিজে লিফটের মাধ্যমে বিভিন্ন তলায় গিয়ে কাজ করতে সক্ষম ছিলো। কাজের চাপ অসহ্য। অনেক সময়ই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কর্মচারীরা। শেষ করে দেন নিজের জীবন।

কিন্তু রোবট আত্মহত্যা করছে, এমন কখনও শুনেছেন? অবিশ্বাস্য মনে হলেও, সত্যিই তাই হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যা করেছে এক রোবট! রোবট সুপারভাইসর নামক ওই যন্ত্রমানবকে গত বৃহস্পতিবার কাউন্সিল বিল্ডিংয়ের সিড়ির মাঝে পড়ে থাকতে দেখা যায়। একই জায়গায় বারবার গোল চক্কর খাচ্ছিল ওই রোবট। এই আচরণ দেখেই সন্দেহ হয়। এতটাই কাজের চাপ যে একটি রোবট নাকি আত্মহত্যা করতে বাধ্য় হয়েছে।

এমন খবর কার্যত সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা দুনিয়ায়। আসলে বলা হচ্ছে কাজের চাপ এখন রোবটের দিকেও পড়ছে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গুমি সিটি কাউন্সিল ২৬ জুন ঘোষণা করে যে, সাইবর্গটি সাড়ে ছয় ফুট সিঁড়ি দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ার পর তাদের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোবটটি সম্ভবত 'মৃত' অবস্থায় পড়ে যায়।

ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, রোবটটির মৃত্যু আসলে আত্মহত্যার শামিল কিনা তা নিয়ে ধারণা করছে সিটি কাউন্সিল। প্রশ্নে থাকা রোবটটি ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে সিটি কাউন্সিল অফিসার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল এবং লিফট কল করে নিজেরাই ফ্লোরের মধ্যে চলাচল করতে পারে।

--হতাশাগ্রস্ত' রোবটের ‘মৃত্যুর কারণ নির্ধারণের জন্য তদন্ত চলছে-- 

প্রশ্ন থেকে যায়: সাইবর্গ কেন এটি করেছিল? গুমি সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোবটটির মৃত্যু নিয়ে দ্রুত তদন্ত শুরু হবে। টুকরো সংগ্রহ করা হয়েছে এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে বিশ্লেষণ করা হবে। ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক রুট স্টার্টআপ বিয়ার রোবোটিক্স (প্রাথমিকভাবে রেস্তোঁরা-পরিবেশনকারী রোবটগুলির শ্রেণির জন্য পরিচিত) দ্বারা তৈরি, অনন্যভাবে ডিজাইন করা রোবটটি সিটি কাউন্সিল অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিল।

একজন কর্মকর্তার মতে, এটি 'দৈনিক নথি সরবরাহ, শহর প্রচার এবং তথ্য সরবরাহে সহায়তা করেছে। অন্য যে কোনও নিয়মিত কর্মচারীর মতো, সাইবর্গটি সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কাজ করেছিল এবং এর সিভিল সার্ভিস অফিসার কার্ডও ছিল। আরেক কর্মকর্তা বলেন, রোবটটি একজন 'পরিশ্রমী' কর্মী।

এই মুহুর্তে, গুমি সিটি কাউন্সিল অন্য কোনও রোবট অফিসার আনার কথা বিবেচনা করছে না। দক্ষিণ কোরিয়া রোবোটিক প্রযুক্তির দ্রুত গ্রহণকারী হিসাবে বিখ্যাত। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রোবোটিক্সের মতে, দেশটিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ রোবট ঘনত্ব রয়েছে: প্রতি দশ জন মানব কর্মচারীর জন্য একটি শিল্প রোবট।

ডিস্টোপিয়া একটি মন-ভোলানো বাস্তবতায় রূপ নেওয়ার সাথে সাথে বেশ কয়েকটি শিরোনাম ইতিমধ্যে এই অভূতপূর্ব ঘটনাটি নিয়ে ওজন করছে, কাজের চাপ এর সাথে লড়াই করার পরে সাইবর্গটি নিজের জীবন নিয়েছে কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। দৃষ্টিভঙ্গিটি ২০০৪ এর সাই-ফাই অ্যাকশন ফ্লিক থেকে বেশ দূরে আই, রোবট, উইল স্মিথ অভিনীত, যেখানে একটি উন্নত রোবট ‘স্বপ্ন’ এর খুব মানবিক ক্রিয়াকলাপ অনুভব করে।

জাপানের গবেষকরা রোবটিক মুখের সাথে জীবন্ত ত্বকের টিস্যু সংযুক্ত করার একটি উপায় আবিষ্কার করার কয়েকদিন পরে এই খবরটি আসে।

--রোবট তো মানুষ নয়, এটা কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারে? -- রোবট তো মেশিন। তার তো আবেগ নেই। সে কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারে। আসলে এটা ছিল একটা প্রযুক্তিগত সমস্যা।

--কিন্তু এটাকে আত্মহত্যা কেন বলা হচ্ছে? -- সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা টানা কাজ করত রোবটটি। সিটি হলের অন্য কর্মীদের মতোই তাকে কাজ করতে হত। তবে এটা এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছিল যে এটা সিঁড়ির দিকে যাবে না। এমনই সেন্সর ছিল এটাতে। কিন্তু এটা সিড়ি দিয়ে পড়ে যাওয়ার আগে এমনভাবে পাক খাচ্ছিল যে সেন্সরকে এড়িয়ে সেটি সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। এরপরই পড়ে যায় রোবটটি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password