সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকায় অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করছেন। ভিপিএনের মাধ্যমে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক চালাচ্ছেন। তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভিপিএন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ইন্টারনেট সীমিত করা হয়। পরদিন (১৮ জুলাই) মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব প্রতিরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে সে সময় তিনি উল্লেখ করেছিলেন। একই দিন সন্ধ্যায় সঞ্চালন লাইনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও। ফলে দেশজুড়ে সব ধরনের ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট খুলে দেওয়া হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকায় অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করছেন।
ভিপিএনের মাধ্যমে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক চালাচ্ছেন। তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভিপিএন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভিপিএন থেকে বিরত থাকি। তথ্য সুরক্ষার জন্য বিরত থাকি। ভিপিএন যে দিচ্ছে, সে পুরো তথ্য উপাত্ত পাচ্ছে।
ভিপিএন চালু রেখে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আর্থিক লেনদেন করলে, গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল তথ্য অন্যের কাছে চলে যেতে পারে। উল্লেখ্য, ভিপিএন সেবায় সত্যিকারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুবিধার কথা উল্লেখ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এগুলো অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ভিপিএন টুল ডাউনলোড করার সময় মোবাইল বা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণসহ ফেসবুক, ইমেইলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ওই ভিপিএন নির্মাতার কাছে। ব্যবহারকারীর ডেটা যেহেতু ভিপিএন সেবাদাতার হাত দিয়ে যায়, তাই সেবাদাতার সততার ওপর নির্ভর করে ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপত্তা।
ভিপিএন ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ঝুঁকি থেকে সচেতন হতে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো :
ডেটা নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা: কিছু ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহারকারীর অনলাইন কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করতে পারে। এ তথ্য বিক্রি বা শেয়ার করার সম্ভাবনা থাকে, যা ভিপিএন ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা বিঘ্নিত করতে পারে। সব ভিপিএন পরিষেবা সমান নয়। কিছু নিম্নমানের ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহারকারীর ডেটা নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেয় না।
ইন্টারনেটের ধীরগতি কিংবা গতি কমে যাওয়া : ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ অসুবিধা হলো ইন্টারনেট সংযোগের গতি কমে যাওয়া। যেহেতু ভিপিএন বিভিন্ন দুর্গম সার্ভারের মধ্য দিয়ে ডেটা পাঠায় ও ডেটা ট্রান্সমিশন এনক্রিপ্ট করে, সেহেতু ব্রাউজিংয়ের সময় কম গতি ও বিলম্বের মতো অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে পারেন ব্যবহারকারী।
সার্ভার সুরক্ষা : ভিপিএন সার্ভার যদি হ্যাক হয় অথবা দুর্বল হয়, তবে ব্যবহারকারীর এনক্রিপ্টেড ডেটা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। যা গ্রাহকের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
আইনি সীমাবদ্ধতা : ব্যবহারকারী দেশের ভিপিএন ব্যবহারের আইনি বিধিমালা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং তা অনুসরণ করে ভিপিএন ব্যবহার করতে হবে। অনুমতি ছাড়া ভিপিএনের ব্যবহার বেআইনি। কিছু দেশে ভিপিএন ব্যবহারের আইনি সীমাবদ্ধতা বা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। স্থানীয় আইন অনুযায়ী ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত, অন্যথায় আইনি সমস্যা হতে পারে।
ভুয়া ভিপিএন পরিষেবা, ফিশিং এবং স্ক্যাম : কিছু ভিপিএন পরিষেবা ভুয়া হতে পারে যা ভিপিএন ব্যবহারকারীর ডেটা চুরি করার চেষ্টা করে। এই ধরনের পরিষেবাগুলো থেকে সতর্ক থাকতে হবে গ্রাহককে।
ভিপিএন জটিলতা : কিছু ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহার করা জটিল হতে পারে, যা নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ভিপিএন একটি শক্তিশালী টুল যা ব্যবহারকারীর অনলাইন নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়ক। তবে ভিপিএনের ব্যবহারসংক্রান্ত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন