রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে শিগগিরই সংস্কারের চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণা করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই রূপরেখার মধ্যে সংস্কারের কর্মপরিকল্পনা এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের উপায়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, হেফাজত ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মতবিনিময় করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘মতবিনিময়ের সময় ড. ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশের জন্য শিগগিরই রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা উপস্থাপন করতে পারবেন।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। এর মাধ্যমে একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য তৈরি হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।
জনগণই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তবে এ মুহূর্তে অগ্রাধিকার হচ্ছে সংস্কার করা। সংস্কারের প্রস্তাবনার ভেতর থেকে ঠিক হবে সরকারের মেয়াদ কতদিন থাকবে। মূলত সংস্কারের প্রস্তাবনা এবং প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তর আসবে। আমরা আশা করি, এটা একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা হবে। রূপরেখা কী, সংস্কার না ক্ষমতা হস্তান্তর এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এতে সবই থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা মূলত সংস্কারের রূপরেখা দেবেন। সংস্কারের ভেতরেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে কখন, কীভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।’ বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমরা গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দায়িত্ব পেয়েছি। এখানে বারবার বলা হচ্ছে রাষ্ট্র মেরামত করার। প্রস্তাবনার ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো জানাবে তারা রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য সরকারকে যৌক্তিক কত দিন সময় দেবে।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছেন, রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে জাতির জন্য এখন সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগের উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে, যেন দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করতে পারি এবং বাংলাদেশের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারে।’
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন বিদ্যমান সংবিধানের সংশোধন, নাকি সংবিধান পুনরায় প্রণয়ন করতে চান। প্রেস সচিব জানান, অনেক নেতা একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সরকারপ্রধান হতে পারবেন না, এমন প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া বিচার বিভাগ পৃথককরণ, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার চেয়েছেন অনেকে।
হেফাজতে ইসলামের নেতারা শাপলা চত্বরে হেফাজতের আন্দোলন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরসহ শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে হেফাজত ইসলামের যেসব কর্মী হতাহত হয়েছেন তার পুনঃতদন্ত চেয়েছেন, তা হতে হবে স্বচ্ছভাবে।
এ ছাড়া শিক্ষানীতির আমূল সংস্কার, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন বিভিন্ন দলের নেতারা। শফিকুল আলম জানান, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী নেতারা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং সবাই আশাবাদী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আমূল সংস্কার দেখতে পাবেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন