"বাঙ্গালি জাতির জনকের আজ ১০১ তম জন্মদিন "

"বাঙ্গালি জাতির জনকের আজ ১০১ তম জন্মদিন "

যৌবনের তের বছর কাটিয়েছেন জেলে । কেউ অনুভূতি জানতে চাইলে মুচকি হেঁসে উত্তর দিতেন

“ ওল্ড এ ম্যান হু ইজ রেডি টু ডাই , নো বডি ক্যান কিল''
২৫ শে মার্চ রাতে বাসা থেকে গ্রেফতারের পরে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে অবরুদ্ধ ছয় দিন, এর পর ঢাকা থেকে করাচী । পরের দিন থেকে মিয়ানওয়ালী কারাগারে কন্ডেমসেলে নয় মাস বন্দি ।

রাজবন্দী হবার পরও তার জন্য বরাদ্দ ছিল, একটা নড়বড়ে চকি , নোংরা পাতলা একটা কম্বল , একটা জগ আর পুরাতন কয়েদির ফেলে যাওয়া চপ্পল । পাশেই জমে থাকা মলমূত্রের দুর্গন্ধ , এর মধ্যেই খাওয়া গোসল । সেলে একটা ফ্যান পর্যন্ত ছিল না। জেলের জেলারও তিন মাস ধরে রাজবন্দীর সাথে রুটিং সাক্ষাতে আসেনি ।শেখ মুজিব জানতেন ইয়াহিয়া একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে । সুযোগ পেলেই তাকে ফাঁসি দিতে এক সেকেন্ড দেরি করবে না ।
তবু শেখ মুজিব নির্লিপ্ত ।

ইয়াহিয়া ধূর্ত শেয়াল । সে খুব ভাল করেই জানত শেখ মুজিবের ফাঁসি এত সহজ না । তাই সে খুব চমৎকার পন্থা অবলম্বন করেছিল তাকে মেরে ফেলার । এক সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া বলেছিল ,
শেখের বিচার হবে তার মানে এই নয় যে আগামী কালই তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে ।
শেখ মুজিবের স্বাভাবিক মৃত্যুও তো হতে পারে সে অবস্থায় আমরা কি করতে পারি বলুন ...।
ইয়াহিয়ার নির্দেশেই কন্ডেমসেলে অসুস্থ মুজিবের জন্য কোন ধরনের চিকিৎসা কিংবা সেবার ব্যবস্থা করা হয়নি। আর শেখ মুজিবও নিজের অসুস্থাতা মেনে নিয়ে পাকিদের সেবা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ।
সময় গড়াল , ১৬ ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হল কিন্তু শেখ মুজিব এর কারাবাস তখনো চলছে ।তাকে জানানো হয়নি দেশ স্বাধীন হয়েছে ।

অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন আর তার পররাস্ট্র সচিব কিসিঞ্জার তাদের কুটচালে ব্যর্থ হয়ে তখন তাদের পরম বন্ধু ইয়াহিয়ার পশ্চাদ বাঁচাতে জানপ্রান ঢেলে দিচ্ছে । ইয়াহিয়ার একটাই আবদার শেখ মুজিব কে সে ঝুলাবেই। বসত ভিটা পুড়িয়ে দিয়ে , পরিবারের উপর অত্যাচার করে , কন্ডেমসেলে ফেলে রেখেও এক চুলও নড়াতে পারেনি সে শেখ মুজিব কে ।ফাঁসি না দিলে তার ইজ্জত বলে কিছু থাকে না ।
কিন্তু এত দিনে এরা বুঝে গেছে শেখ মুজিব কে ফাঁসি দেয়া অসম্ভব । ভুট্টো শেষ চেষ্টা হিসেবে শেখ মুজিব কে নানা ভাবে বুঝিয়ে একটা যোগ সূত্র রাখতে চেয়েছিল , কিন্তু ফাঁসির দড়ি যাকে রুখতে পারেনি সেখানে ভুট্টো কোন ছাড় । শেষ পর্যন্ত ভুট্টো বলেছিল,
“শেখ সাহেব আপনি দেখছি নরকের মতই জেদি
হ্যাঁ ভুট্টোর ভাষায় এই জেদি, গোয়ার ,পাথরের মত শক্ত মানুষটি প্রচন্ড ভেঙেছিলেন । দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদেছিলেন। যখন প্রথম তিনি জানতে পারলেন তার জেল জীবনের নয়মাসে কি ঘটেছে, কত রক্ত ঝড়েছে, কত সম্ভ্রম গেছে। তার দেশটাকে একটা শ্মশান বানিয়ে দেয়া হয়েছে ।

৪২ বছর চলে গেছে । রাস্তা ঘাটে অসংখ্য নেতা । আজকাল মাস খানেক জেল খাটলেই নেতা হওয়া যায়। পাকিস্তানি চাটার দলও আজকাল নেতা হয় । বছর খানেক মিছিল মিটিং করলেই শিক্ষানবিশ থেকে পাকাপোক্ত নেতায় পদোন্নতি মেলে ।
কিন্তু শেখ মুজিব কেন আর দ্বিতীয়টা তৈরি হল না ? কারণ তিনি নেতা নন, পিতা হয়েছিলেন। আর কেউ কি কোন দিন এমন পিতা হতে পারবে ? পারবে এমন করে দেশ কে ভালবাসতে।
দেশকে প্রকৃতভাবে ভালবাসা কি এতই সহজ?
তথ্য সূত্র - পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু

লেখক- রবার্ট পেইন,অসমাপ্ত আত্মজীবনী',বঙ্গবন্ধু: রাজবন্দীর চিঠি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password