থার্ডহ্যান্ড ধূমপান: ধূমপায়ীর পোশাক থেকেও হতে পারে ক্ষতি

থার্ডহ্যান্ড ধূমপান: ধূমপায়ীর পোশাক থেকেও হতে পারে ক্ষতি

সিগারেট বা ই-সিগারেট পানে অভ্যস্ত বন্ধুটিকে নিয়ে একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যেতে নিশ্চয় কেউ আপত্তি করে না। অন্তত যতোক্ষণ সেই বন্ধু সিগারেট জ্বালাচ্ছেন না ততোক্ষণ তাকে সহ্য করতে তো সমস্যা নেই! কারণ এটা ক্ষতিকর নয়, যদিও তার পোশাক থেকে নিকোটিনের গন্ধ নাকে আসবে। 

কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে,  ধূমপায়ী সব সময়ই ক্ষতিকর! সামনা-সামনি ধূমপান করলে তো পরোক্ষ ধূমপান হবেই, তিনি ধূমপান না করলেও আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, তামাক দূষণের শিকার কেনো দেয়াল, বিছানা, কার্পেট বা সিগারেটের গন্ধ আছে এমন ঘরের অন্য যেকোনো বস্তুর পৃষ্ঠতল, ধূমপায়ীর শরীর এবং পোশাক থেকেও পাশের জনের নিকোটিন গ্রহণ করা হয়ে যেতে পারে। এটিকেই বলা হচ্ছে ‘থার্ডহ্যান্ড ধূমপান’।

ধূমপানের ফলে এই যে বিভিন্ন পৃষ্ঠতলে নিকোটিনসহ সিগারেটের নানা বিষাক্ত রাসায়নিক লেগে থাকছে, সেগুলো ধীরে ধীরে পরিবেশে উন্মুক্ত হয়। এটি এমন স্থানেও ঘটতে পারে যেখানে হয়তো এর আগে কখনোই ধূমপান করা হয়নি। 

গবেষণায় আরো অস্বস্তিকর যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে সেটি হলো, এভাবে যে পরিমান ক্ষতিকর রাসায়নিক পরবর্তীতে পরিবেশে উন্মুক্ত হয় তা বদ্ধ স্থানে ১০টি সিগারেট পান করলে একটি সিগারেটের সমান হয়। এভাবেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক ইয়েল ইউনিভার্সিটির রাসায়নিক ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড্রিউ গেন্টনার।

গবেষণাপত্রটি গত বুধবার সায়েন্স অ্যাডভানসেস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাতেই প্রথম দেখানো হয়েছে, নিকোটিন বা অন্যান্য তামাকজাত ক্ষতিকর রাসায়নিক পোশাকের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

থার্ডহ্যান্ড ধূমপানের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় গবেষকরা বলছেন, এটি আসলে সেই অর্থে ধূমপান নয়, যেরকমটি সেকেন্ডহ্যান্ড বা পরোক্ষ ধূমপানে ঘটে থাকে। এটি মূলত নিকোটিন এবং অন্যান্য রাসায়নিকের অবশেষ। এসব রাসায়নিকের অনেকগুলোই ক্ষতিকর। এই অবশেষগুলো ধূমপানের স্থানে বেশ দীর্ঘ সময় রয়ে যেতে পারে। 

এসব রাসায়নিকের কিছু অংশ বিভিন্ন বস্তুর পৃষ্ঠতলে লেগে থাকে আবার কিছু লেগে থাকে ধূলিকণার সঙ্গে। কিছু আবার দেয়ালের ফাঁকফোকর, পর্দার কাপড় এবং সোফা বা এ ধরনের আসাবপত্রের সঙ্গেও লেগে যায়। দীর্ঘসময় এসব রাসায়নিক এভাবে লেগে থাকলে সেগুলো ঘরের পরিবেশে অক্সিডেন্ট বা অন্যান্য কণার সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্ষতিকর উপজাত তৈরি করতে পারে, যা পরে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

গবেষণার জন্য গেন্টনার ও কয়েকজন পিএইচডি গবেষক শিক্ষার্থী এমন একটি মুভি থিয়েটারকে বেছে নেন যেখানে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ধূমপান নিষিদ্ধ আছে। প্রথমে তারা ওই থিয়েটারে নির্মল বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করেন এবং নিশ্চিত হোন যে সেখানে ধূমপান বা অন্যান্য দূষণ বস্তু নেই। এরপর দর্শক সিনেমা দেখতে আসার  আগে ও পরে উন্নতমানের যন্ত্র দিয়ে থিয়েটারের ভেতরের বাতাসে বস্তুকণার উপস্থিতি পরিমাপ করা হয়। তারা থিয়েটারের ভেতরের বাতাসে প্রচুর পরিমানে ক্ষতিকর রাসায়নিক কণা দেখতে পেলেন। এমনটি দর্শকরা চলে যাওয়ার পরদিনও উল্লেখযোগ্য পরিমানে রাসায়নিক বাতাসে মিশে থাকতে দেখা গেছে।

জনসমাগমস্থলে ধূমপায়ীর মাধ্যমে অধূমপায়ীর ফুসফুসেও নিকোটিন ঢুকে যাওয়ার মতো পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই জানেন। কিন্তু থার্ডহ্যান্ড ধূমপান সম্পর্কে এ গবেষণার আগে জানা যায়নি। অর্থাৎ ধূমপায়ী যে দূষণ ঘটান তা দীর্ঘমেয়াদে এবং দূরবর্তী মানুষেরও ক্ষতি করতে পারে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password