বিদেশে গোপন অভিসারে যেতে দুই বান্ধবীর প্রতিযোগিতা হতো সতীনের মতো

বিদেশে গোপন অভিসারে যেতে দুই বান্ধবীর প্রতিযোগিতা হতো সতীনের মতো

সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে কানাডায় পালিয়ে গেছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পিকে হালদার) হালদার।  তার এই অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছন অনেকেই।  তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্যানুসারে পি কে হালদারের দুই ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর নামও পাওয়া গেছে।  একজনের নাম নাহিদা রুনাই। অন্যজনের নাম অবন্তিকা বড়াল। 

এক কথায় এই দু’জনের সঙ্গেই পি কে হালদারের সম্পর্ক ছিল স্বামী-স্ত্রী’র মতোই। আর এই দু’ই নারী একে অপরের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল সতীনের মতো।

হালদারকে কাছে পেতে মরিয়া ছিলেন এ দু’জন। নিজের রূপ, যৌবন দিয়ে কাছে টেনে রাখতে চাইতেন। এ নিয়ে এক ধরনের যুদ্ধ চলছিল অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইয়ের মধ্যে। কিন্তু দু’জনকেই একান্তে চাইতেন পি কে হালদার। একজনের অজান্তে অন্যজনকে নিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতেন। চলে যেতেন দেশের বাইরে। 

পি কে হালদারের সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।  সেই মামলায় আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী। 

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের কাছে দেওয়া ওই জবানবন্দিতে নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকা বড়ালের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন উজ্জ্বল কুমার নন্দী। 

জবানবন্দিতে রুনাইকে ‘বড় আপা’ উল্লেখ করে উজ্জ্বল বলেন, ‘পি কে হালদারের ২ বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাই। এই দু’জনের সঙ্গে তিনি পৃথকভাবে ২০ থেকে ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। পি কে হালদারের সঙ্গ পাওয়া নিয়ে ওই দু’জনের মধ্যে চলতো ব্যাপক প্রতিযোগিতা। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদারকে আলাদাভাবে সময় কাটাতে দেখা যায়।

এর আগে ১৩ জানুয়ারি দুদকের একটি দল রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে অবান্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করে। এখন পর্যন্ত তিনি কারাগারেই আছেন।  পিকে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে এই অবন্তিকার বিরুদ্ধে।

জবানবন্দিতে উজ্জ্বল কুমার নন্দী আরও বলেন, ‘আমরা রুনাইকে বড় আপা আর অবন্তিকাকে ছোট আপা ডাকতাম। কারণ রুনাই চালাত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং আর অবন্তিকা চালাত পিপলস লিজিং। পি কে হালদার বিভিন্ন সময় আমাকে বিভিন্ন দেশে প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাতেন। তার সঙ্গে ৩ বার মালয়েশিয়ায় গিয়েছি। আমার সঙ্গে অমিতাভ অধিকারী, রাজীব সোমও মালয়েশিয়ায় যান। একবার যাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। প্রতিবারই ভ্রমণের সব খরচ দিয়েছেন পি কে হালদার। তার টাকায় আমি সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে গিয়েছি ৩ বার। এসব ভ্রমণে আমার সঙ্গী হতো রাজীব সোম, অমিতাভ অধিকারী এবং পি কের বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল।’ 

দুদকের অনুসন্ধান দলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদারের সম্পর্ক ছিল স্বামী-স্ত্রীর মতোই। আর রুনাই ও অবন্তিকার সম্পর্ক ছিল সতীনের মতো। বিদেশ ভ্রমণ নিয়েও তাদের দু’জনের মধ্যে ছিল তীব্র প্রতিযোগিতা। একবার গোপনে অবন্তিকাকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে প্রমোদ ভ্রমণে যান পি কে। রুনাই বিষয়টি জানতে পেরে পি কের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান বলে বিভিন্ন জনের বক্তব্যে উঠে এসেছে। এ ছাড়া অবন্তিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে পি কের ওপর কয়েক বারই হামলা করে রুনাই।’

কে এই পি কে হালদার

পি কে হালদারের জন্ম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে। বাবা প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদার। তাঁর মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পি কে হালদার ও প্রিতিশ কুমার হালদার—দুই ভাই–ই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

২০০৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই ভাই মিলে ভারতে হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে কোম্পানি খোলেন ২০১৮ সালে, যার অন্যতম পরিচালক প্রিতিশ কুমার হালদার। কলকাতার মহাজাতি সদনে তাঁদের কার্যালয়।

আর কানাডায় পিঅ্যান্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে কোম্পানি খোলা হয় ২০১৪ সালে, যার পরিচালক পি কে হালদার, প্রিতিশ কুমার হালদার ও তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কানাডার টরন্টোর ডিনক্রেস্ট সড়কের ১৬ নম্বর বাসাটি তাদের।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password