সারাদেশে ঝড়ে লন্ডভন্ড কয়েকশ ঘরবাড়ি, বজ্রপাতে নিহত ১২

সারাদেশে ঝড়ে লন্ডভন্ড কয়েকশ ঘরবাড়ি, বজ্রপাতে নিহত ১২
MostPlay

তীব্র ঝড়, বৃষ্টি আর বজ্রপাতে দেশের কয়েক জেলায় ১২জনের প্রাণ গেছে। ভেঙ্গে পড়েছে গাছপালা। বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশকিছু এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচাপাকা বসতঘর। তাপদাহের মধ্যেই কালবৈশাখী ঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে দেশের কয়েকটি এলাকা। ঝড়ে এবং বজ্রপাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আট জেলায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২০ জনের বেশি। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকশ ঘরবাড়ি।

রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে এই কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। আজ পর্যায়ক্রমে প্রায় সব বিভাগেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি পর্যন্ত কমতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে সপ্তাহ শেষে তাপমাত্রা আবার বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে নিহত ৩ ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা ( ১১)। রোববার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সদর ও কাঠালিয়া উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে।

ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত হেলেনা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে। মিনারা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট গ্রামে ও মাহিয়া আক্তার ঈশানার বাড়ি পোনাবালিয়া গ্রামে। এর মধ্যে হেলেনা বেগম ও মিনারা বেগম গৃহিণী এবং মাহিয়া আক্তার ঈশানা আফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

পোনাবালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.ফারুক হোসেন খান বলেন, ভ্যানচালক বাচ্চুর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। আমরা ইউনিয়নবাসী এমন ঘটনায় গভীর শোকাহত। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় এক শিশু ও নারী এবং কাঠাঁলিয়া উপজেলায় এক নারী নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করা হবে।

ভোলায় ঘরে চাপা পড়ে ও বজ্রপাতে নিহত ২ জেলার লালমোহন, মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলায় রোববার সকালে ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। এতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত, গাছপালা, বিদ্যুৎ লাইন, মাঠের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই আকস্মিক ঝড়ে লালমোহন উপজেলায় ঘর চাপা পড়ে হারিস (৬৮) এবং বজ্রপাতে বাচ্চু (৪০) নিহত হন।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, আজকের ঝড়ে লালমোহন উপজেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বদরপুর ইউনিয়নে হারিস ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন। তার বাড়ি ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নে। তিনি ভিক্ষা করতেন। এছাড়া চরভুতা ইউনিয়নের লেঙ্গুটিয়া গ্রামে বজ্রপাতে বাচ্চু নামে একজন নিহত হয়েছেন।

তিনি জানান, লালমোহন উপজেলায় বেশ কিছু বাড়িঘর আংশিক ও সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি হয়েছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পটুয়াখালীতে ঝড়ে নিহত ২ পটুয়াখালীর বাউফলে কালবৈশাখী ঝড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই ঝড় হয়। নিহতরা হলেন রাতুল (১৪) ও সুফিয়া বেগম (৮৫)। নিহত রাতুল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর সুফিয়া বেগম দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী।

ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান। এ ছাড়া গোসিংগা গ্রামের আফসেরের গ্রেজ এলাকায় ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে মা সাবিহা (৩০), তার মেয়ে ইভা (১২) ও দুই বছর বয়সী আরেক শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে। পিরোজপুরে ঝড়ে একজনের মৃত্যু পিরোজপুরে ১০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে কয়েকশ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় রুবি নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন।

আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ৯টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত চলে এ ঝড়। ঝড়ে মারা যাওয়া ওই গৃহবধূ রুবি সদর উপজেলার মরিচাল এলাকার বাসিন্দা। এ সময় তার শিশুসন্তানও গুরুতর আহত হয়। এদিকে ঝড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ। গাছপালা ভেঙে পড়ে পিরোজপুরের সঙ্গে বরিশালের সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, সকালে হঠাৎ চতুর্দিকে কালো মেঘ ঢেকে যায়। কিছু সময় পর তীব্র বেগে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে কয়েকশ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঝড়ে অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে টিনের চালা উড়ে যায়। ধানক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। সড়ক-ঘরবাড়ির ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েক মিনিটের ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

ঝড় থেমে যাওয়ার পর স্থানীয়রা সড়ক থেকে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত রুবি নামের একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বাগেরহাটে ঝড়ে আহত ১০, বজ্রপাতে নিহত ১ বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে গাছ ও বিলবোর্ড পড়ে ১০ জন আহত হয়েছেন। ঝড়ের সময় গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কচুয়া উপজেলার চরসোনাকুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম লিকচান (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা ৪০ থেকে ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ঝড়-বৃষ্টিতে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়। স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসে আকাশ। সকালেই যেন রাত নেমে আসে। এর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টি। এতে বাগেরহাট সদর উপজেলার পুটিমারি, রাধাবল্লভ, গবরদিয়য়, ডেমা, বাশবাড়িয়া, শহরতলীর মারিয়া পল্লী ও কচুয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়।

নেত্রকোনায় বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় হাওরে কাজের সময় বজ্রপাতে শহীদ মিয়া (৫২) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২ টার দিকে উপেজলার রাজঘাট হাওরে বজ্রপাতে নিহতের এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কৃষক শহীদ মিয়া উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। নিহতের ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচ খেত পরিচর্চার কাজ করছিলেন শহীদ মিয়া। বেলা পৌনে ১২ টার দিকে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় একটি বজ্র শহীদ মিয়ার উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।

খালিয়াজুরী থানার ওসি খোকন কুমার সাহা জানান, এ ঘটনায় নিহত শহীদ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুলনায় বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু খুলনার ডুমুরিয়ায় বজ্রপাতে ওবায়দুল্লাহ গাজী (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে এই ঘটনা ঘটে।

ওবায়দুল্লাহ ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের কোমলপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন গাজীর ছেলে। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে ওবায়দুল্লাহ কানাইডাঙ্গা বিলে মাছের ঘেরে ঘাস কাটতে যান। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ডুমুরিয়া এলাকায় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় ওবায়দুল্লাহ নিজ ঘেরের বাসায় অবস্থান করেন। সকাল ৮টার দিকে বজ্রপাতে বাসার ভিতরে তার মৃত্যু হয়।

ডুমুরিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সাহা বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যশোরে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকালে উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বিলে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলি পাটোয়ারীর ছেলে। ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পোদাউলিয়া গ্রামের জাহান আলি জানান, সকালে বাড়ির পাশের বিলে নিজের ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন আব্দুল মালেক। এ সময় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বৃষ্টি থামার পর অন্য কৃষকরা বিলে গেলে তাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password