সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নিউজ পোর্টাল, টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্যসব অনলাইন মাধ্যমে যাতে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে না পারে সে জন্য অবিলম্বে দৃশ্যমান সব অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট ব্লক করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে বিকাশ, নগদ, রকেট, এমকেশসহ দেশের সব মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে যাতে আর্থিক লেনদেন করতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জনস্বার্থে নির্দেশ জারি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারাধীন এক রিটে এক আবেদনের শুনানির পর বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজি।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান। আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজি বলেন, “বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল, টিভি চ্যানেল বিশেষ করে খেলার চ্যানেলে ওয়ানএক্সবেট, মেলবেট, বাজি, বাজি স্পোর্টস, বেটউইনার, টেনক্রিক, বেটথ্রিসিক্সটিফাইভ, বিজে বাজিসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে।
এর ফলে বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণরা অভিভাবকসহ সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর-প্রতিবেদনও হয়েছে।” এ আইনজীবী বলেন, “এ সংক্রান্ত একটি রিট হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকলেও টিভি চ্যানেল বিশেষ করে খেলার চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম, বিভিন্ন পোর্টালসহ অনলাইনে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।
আর এসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে নীরবে অনলাইন জুয়ায় জাড়িয়ে যাচ্ছে অনেকে। আর এ জুয়ার লেনদেন হচ্ছে পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে। এতে অর্থ পাচারের মত ঘটনাও ঘটছে।” আইনজীবী মিয়াজি বলেন, “এসব বিষয়ে প্রচারিত, প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু তাতেও অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধ না হওয়ায় বিচারাধীন রিটে এ আবেদনটি করা হয়।” অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে গত বছর ডিসেম্বরে হাআকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিফতাউল আলম ও সুমিত কুমার সরকার। এ রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ১৯ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন।
টেলিভিশন বিশেষ করে খেলার চ্যানেল, নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দৃশ্যমান স্ক্রিনে খেলা অথবা খবরের ফাঁকে অবৈধ অনলাইন বাজি বা জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ বা অপসারণে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অবিলম্বে এসব বিজ্ঞাপনের প্রচার বন্ধ বা অপসারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুলটি বিচারাধীন। এর মধ্যে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে ওয়েবসাইট ব্লকের নির্দেশনা চেয়ে এ আবেদন করেন রিটকারীরা।
সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদ ও ‘দ্য পাবলিক গেমব্লিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ অনুসারে ভাগ্যনির্ভর অথবা টাকার সম্পৃক্ততা আছে সব ধরনের বাজিই জুয়া। আর সব ধরনের জুয়া বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। তাছাড়া জুয়া নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে নিষেধাজ্ঞাও আছে। সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, জুয়া খেলা নিরোধে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন