হাজী সেলিমের দখলে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের জমি উদ্ধার

হাজী সেলিমের দখলে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের জমি উদ্ধার

ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ হাজি মো. সেলিমের দখল থেকে প্রায় ২০ শতক জমি উদ্ধার করেছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির পুরান ঢাকার মৌলভিবাজারের করপোরেট শাখার এই জমি ১০ বছর দখল করে রেখেছিলেন ওই সাংসদ। অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত সোমবার শ্রমিক নিয়োগ করে নিজেদের ওই জমি দখলে নেয়।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে পুরান ঢাকার ৭৮/১ মৌলভিবাজারে দেখা যায়, ৩৫ থেকে ৪০ জন শ্রমিক ব্যাংকের ওই জমিতে থাকা ইট সরাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অবৈধ দখলদারেরা এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করলেও কাজ শুরু করেননি। তবে তাঁরা অগ্রণী ব্যাংকের করপোরেট শাখার দোতলা ভবনটি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।

অগ্রণী ব্যাংকের হেড অব সিকিউরিটি প্রটোকল মেজর (অব.) মো. আসাদুজ্জামান মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে বলেন, সাংসদ হাজি সেলিম তাঁর স্ত্রী গুলশান আরার নামে জাল দলিল বানিয়ে সরকারি জমি দখল করে নিয়েছিলেন। জমিতে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের দোতলা ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে থাকা ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গায়েব হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সরকারি জমি উদ্ধারে একটি মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১০ বছর পর জমিটি অবৈধ দখলমুক্ত করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এখন জমির চারদিকে পাকা সীমানাদেয়াল বানিয়ে ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ করে এর নিরাপত্তায় আনসার মোতায়েন করা হবে।

অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে জমি উদ্ধারে চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পাশাপাশি র‍্যাব-৩-এর টিকাটুলী কার্যালয়ে আবেদন করা হয়। এ নিয়ে ঢাকার যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে মামলাও করা হয়েছে। চলতি বছরের ২০ মে জিডি ও র‍্যাবের কাছে আবেদন করেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের মৌলভীবাজার করপোরেট শাখার প্রধান সহকারী মহাব্যবস্থাপক বৈষ্ণব দাস মণ্ডল।

ওই আবেদনে বলা হয়, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৪৭ সালের তৎকালীন হাবিব ব্যাংক, যা ১৯৭২ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড মৌলভীবাজার করপোরেট শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বর্তমান ব্যাংকের গুদামঘর ও লকার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও অর্থসম্পদ সংরক্ষিত আছে। চকবাজারের বড় কাটরার বাসিন্দা হাজি মো. সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা সেলিমসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন ৭৮/১, মৌলভীবাজারের মালিকানা দাবি করে অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করছেন এবং রাতের বেলা ভবনের প্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢোকার পাঁয়তারা করছেন।

শুধু তাই নয়, তারা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছেন, যা রাষ্ট্রমালিকানাধীন তথা অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের গোডাউন ও লকারে থাকা সম্পদের নিরাপত্তা জন্য হুমকিস্বরূপ। গুলশান আরা সেলিম ও স্বামী হাজি সেলিমের লোকজন ৭৩ বছর ব্যাংকের দখলে থাকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করে সেখানে স্থাপনা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেলা যুগ্ম জজ আদালতে মামলা বিচারাধীন।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। এ সময় একটি গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়িতে ছিলেন হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান এবং তার লোকজন। ওয়াসিফ নিজের পরিচয় দিয়ে গাড়িটিকে থামতে ইশারা করেন এবং কথা বলতে চান। তখন গাড়ি থেকে নেমে ওয়াসিফকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করেন ইরফান ও তার লোকেরা।

পরে সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন ওয়াসিফ। এরপর শুরু হয় পুলিশ ও র‍্যাবের তৎপরতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাজি সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি চালায়। তার ছেলে ইরফান ও গাড়িচালক মিজানুরকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদ থেকে মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password