শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দল সমর্থিত শিক্ষকরা। এসময়, শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা জানান তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই সারা দেশে পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্বরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে লুৎফর রহমান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু দেশের অগ্রণী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। এদেশের মুক্তিসংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সব অগণতান্ত্রিক শক্তি ও স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সংগ্রামী ও ঐতিহ্যবাহী ভূমিকার কথাও দেশবাসীর অজানা নয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই যে, গত প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের পরিচালিত শিক্ষক সমিতি আর সেই ভূমিকা পালন করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘তাদের কর্মকাণ্ডে শিক্ষক সমাজের মতামত ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটছে না। সাম্প্রতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনেও এমনটাই ঘটেছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেমন এগিয়ে আসেনি, তেমনই শিক্ষক সমিতিও কোনও ভূমিকা রাখেনি।
এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও জাতির এ চরম ক্রান্তিকালে বিবেকের তাড়নায় আপনাদের সামনে আজ আমাদের এ বক্তব্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি— কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী চলমান ছাত্র আন্দোলনটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।’ শিক্ষকরা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করে বর্তমান সরকার দেশের গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে একটি শ্রেণি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছে। অপরদিকে দেশের সিংহভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপন কেবল কষ্টকরই নয়, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের মনে যে দ্রোহের সঞ্চার হয়েছে, এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবারের স্বতঃস্ফুর্ত গণআন্দোলনে। আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, তৃতীয় পক্ষের ইন্দন ইত্যাদি বয়ান তৈরি করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
--শিক্ষকদের ১১ দফা দাবি--
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্র নামধারী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলা এবং পরবর্তীকালে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২. সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ। ৩. অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা।
৪. কারফিউ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে জনজীবন স্বাভাবিক করা।
৫. জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ হত্যায় জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও একইসঙ্গে এ হামলায় আহত সবার সুচিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করা।
৬. আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধনের ঘটনা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।
৭. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি হেফাজত থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং গ্রেফতারকৃত সব শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান।
৮. শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার এবং তাদেরকে গ্রেফতার ও হয়ারনি না করা।
৯. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বশেষ ৮ দফা দাবি দ্রুত ব্যস্তবায়ন করে সংকটের সমাধান করা।
১০. তদন্ত ছাড়াই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পেশাজীবীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গণগ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে বর্বরোচিত নির্যাতন বন্ধ করা এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদান করা।
১১. জনদাবি মেনে নিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাদা দলরে যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার, প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন