ডিজে নেহার কথিত সেই খালাতো ভাই কারাগারে

ডিজে নেহার কথিত সেই খালাতো ভাই কারাগারে

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে অতিরিক্ত মদপান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার ডিজে নেহার কথিত খালাতো ভাই সাফায়েত জামিলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

শুক্রবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন। আদালত সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিন রিমান্ড শেষে সাফায়েত জামিলকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. সাজেদুল হক। আসামিকে আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করলে বিচারক জামিন শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সাফায়েত জামিলকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত।আদালত সূত্র জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবার দায়ের করা মামলায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাফায়েত জামিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। 

সেদিন লিখিতভাবে বলেন, তিনি এই মামলার আসামি হতে চান। তাকে যেন এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। সেদিন আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

এদিকে ডিজে নেহার কথিত এই খালাতো ভাইকে নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেফতার এই তরুণের পুরো নাম সাফায়েত জামিল বিশাল। এই তরুণ ডিজে নেহা ওরফে কুইন নেহার সম্পর্কে ‘খালাতো ভাই’। নেহার ডান হাত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন সাফায়েত।

সাফায়েত প্রায় সার্বক্ষণিকই নেহার সঙ্গেই থাকতেন বলে জানা গেছে। শিশা লাউঞ্জে নেহা ও বিশালের গোপন ভিডিও গণমাধ্যমের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। 

নেহার খালাতো ভাই পরিচয় দেওয়া সাফায়েত মূলত তাদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় নয় বলে জানান নেহার খালা। তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, নেহারা আগে যে বাসায় ভাড়া থাকতেন ওই বাসার এক মহিলাকে ধর্মের বোন ডেকেছে আমার বোন। সে থেকেই নেহা ও সাফায়েত খালাতো ভাইবোন পরিচয়ে একসঙ্গে চলাফেরা করতেন, ঘুরে বেড়াতেন। সাফায়েত উশৃঙ্খল প্রকৃতির ছেলে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে- সাফায়েতের হাত ধরেই নেহা এমন পথে পা বাড়ায়

তথ্য পাওয়া গেছে, উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের মদপান করাতে নেহা ও তার খুব কাছের বন্ধু আরাফাত ভূমিকা পালন করেন। মদপানের পর ওই আরাফাতও মারা গেছেন। নেহার ফোনেই তার খালাতো ভাই সাফায়েত জামিল এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মদ কিনে নিয়ে যান ওই রেস্টুরেন্টে। সাফায়েত নেহার ক্লায়েন্টদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন। এছাড়াও অবৈধ দরদামে তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্বপালন করতেন।

নেহার খুব পছন্দের মোবাইল ফোন ব্রান্ড ‘আইফোন’। টার্গেটকৃত শিল্পপতি ও ধনী যুবকদের নম্বর ‘ক্লায়েন্ট-১’, ‘ক্লায়েন্ট-২’, ‘ক্লায়েন্ট-৩’ এমন ধারাবাহিকভাবেই মোবাইল ফোনে সংরক্ষণ করে রাখতেন ডিজে নেহা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে অতিরিক্ত মদপান করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলায় বৃহস্পতিবার ডিজে নেহা গ্রেফতার হন। এরপর শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রাতের ঢাকার বার-রেস্টুরেন্টের অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে।

উল্লেখ্য, ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বো স্যুটে নেহার আয়োজিত মদের পার্টিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। পরে মোহাম্মদপুরের এক বান্ধবীর বাসায় তাকে নিয়ে অবস্থান করেন তার বন্ধু রায়হান। রাতে রায়হানের সঙ্গে ওই ছাত্রীর শারীরিক সম্পর্ক হয়।

পরদিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি তিনি মারা যান। রায়হানসহ পাঁচজনকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা মামলা করেন। এ মামলার আসামি আরাফাত বিষাক্ত মদ খেয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া রায়হান, তাফসির ও সাফায়েত জামিল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password