স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে শংকার ইঙ্গিত দিলেন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে শংকার ইঙ্গিত দিলেন

মহামারি করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। প্রায় ৯ মাসের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। ৩ হাজার ৫৬৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। গতকালও (২৩ মার্চ) সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ছাড়িয়ে। সেদিন ছিল তিন হাজার ৫৫৪ জন। এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ অবস্থার দিকে যেতে পারে দেশের পরিস্থিতি- এমন শংকার ইঙ্গিত এসেছে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, রোগের বিস্তার রোধে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। রোগের উৎপত্তি কমাতে হবে। কারণ রোগী যে হারে আসছে, এভাবে চলতে থাকলে এই ব্যবস্থায় কুলাবে না। দেশকে রক্ষা করতে হলে, অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতেই হবে।

করোনা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে দেশবাসীকে আরও সতর্কভাবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে চলার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, গতমাসে সংক্রমণের হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ। সেটি গতকাল (২৩ মার্চ) হয়েছে ১৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে করোনা শয্যা সংখ্যা আবারও বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে আরও অন্তত ৫টি হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার কাছের জেলাগুলোতেও কোভিড ইউনিট বাড়াতে বলা হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকানো এবং আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকার আন্তরিক। তবে দেশের মানুষ যদি মাস্ক না পরেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলেন তাহলে করোনা পরিস্থিতি ভবিষ্যতে সামলানো মুশকিল হতে পারে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকালেও ‘লকডাউনের’ কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি বলে জানান মন্ত্রী। বুধবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় নেওয়া হলে তখন জানিয়ে দেওয়া হবে। লকডাউনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেয় না।

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফের ‘লকডাউনের’ সুপারিশ করবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে আমরা পরীক্ষা নিচ্ছি। আমরা স্বাস্থ্যবিধির ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেও বেশি জোর দিচ্ছি। যেসব স্থানের কারণে রোগী বাড়ছে, সংক্রমণ বাড়ছে, ওই স্থানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সংক্রমণের হার কমে যাবে, রোগী বাড়বে না। কাজেই উৎপত্তিস্থলগুলোকে আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তারপর আমরা অন্যকিছু চিন্তা করব।

উৎপত্তিস্থল বলতে কী বোঝাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে। আমরা চাই সেগুলো সীমিত হোক। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গতবছর দেশে করোনা মহামারির প্রকোপ শুরু হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মার্চের শেষ সপ্তাহে ‘সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়’। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, বিপণি বিতান ও উপাসনালয় বন্ধ রাখার পাশাপাশি যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে দেশের ১৭ কোটি মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। 

টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর গত ৩১ মে থেকে অফিস খোলার পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। ধীরে ধীরে শুরু হয় ফ্লাইট চলাচল। আগস্টে বিনোদন কেন্দ্রগুলোও খুলে দেওয়া হয়। ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রেখেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড­ সচল রাখতে পুরো দেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি এলাকায় সেই ব্যবস্থাও চালানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। 

গত ডিসেম্বরের পর দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও চলতি মার্চের শুরু থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। গত বছরের জুলাইয়ের পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password