রমজান উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় এর গণবিজ্ঞপ্তি

রমজান উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় এর গণবিজ্ঞপ্তি

পবিত্র রমজান উপলক্ষে খাদ্যদ্রব্যে নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহ মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে এবং নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ ও এর অধীনে প্রকাশিত বিধি/প্রবিধানমালা সম্পর্কে জনগন ও খাদ্য ব্যবসায়ীদের জ্ঞাতার্থে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে খাদ্য মন্ত্রণালয় এর অধীনে থাকা"Bangladesh Food Safety Authority" বা "বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ"যা জনগণের কাছে (BFSA) নামে পরিচিত।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ৪৩ নং আইন) এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বায়ত্তশাসিত জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সরকারি কর্তৃপক্ষ, যা একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানরূপে কাজ করে এবং এটির সদর দপ্তর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত।মুস্তাক হাসান মোঃ ইফতেখার হচ্ছেন এই কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

বর্তমানে এর চেয়ারম্যান মো: আব্দুল কাইউম সরকার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পক্ষ থেকে ন্যাশনাল টিম লিডার নাসের ফরিদের নেতৃত্বে একটি কারিগরি দল নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক রুপদানে সরকারকে সাহায্য করছে।

নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর অধীনে২০১৫ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি এই কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।এই কর্তৃপক্ষ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।এই কর্তৃপক্ষকে আমেরিকান খাদ্য এবং ড্রাগ প্রশাসন-এর মতো করে তৈরি করা হয়েছে।এটি পাঁচ জন ব্যক্তির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।এই সংস্থার নিজস্ব ভ্রাম্যমাণ আদালত রয়েছে যা অনিরাপদ খাদ্য বিক্রেতাদের জরিমানা এবং দণ্ডাদেশ প্রদান করে।

Bangladesh Food Safety Authority" বা "বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ" এর প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি তে- পবিত্র রমজান উপলক্ষে খাদ্যদ্রব্যে নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহ মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে এবং নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ ও এর অধীনে প্রকাশিত বিধি/প্রবিধানমালা সম্পর্কে জনগন ও খাদ্য ব্যবসায়ীদের জ্ঞাতার্থে বলা হয়- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার সামগ্রী তৈরী ও পরিবেশন করলে অনুজীব ঘটিত রোগ-বালাই হতে পারে।

ইহা নিরসনে ও বিক্রয়ের জন্য নিয়োজিত খাদ্যকর্মীগণকে স্বাস্থ্যবিধান (সংক্রামক রোগমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন, অ্যাপ্রন, মাথায় চুল ঢাকার ক্যাপ ও হ্যান্ড গ্লোবস পরিধান) মেনে চলতে হবে এবং খাদ্য স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খাদ্য বা খাদ্য‌ উপকরণ উন্মুক্ত রাখলে তা ধুলা-বালি, পোকামাকড় বা মাছির মাধ্যমে নানা ধরনের রোগ জীবাণু দ্বারা অনিরাপদ হতে পারে, সুতরাং সকল প্রকার খাদ্য ও খাদ্য উপকরণ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঢেকে রাখুন।

মে কোন ধরনের শরবত বা পানীয় তৈরীতে অনিরাপদ পানি, অননুমোদিত সুগন্ধি বা রঞ্জক পদার্থ কিংবা অনিরাপদ পানি দিয়ে তৈরি বরফ ব্যবহার করলে অণুজীব ও রাসায়নিক দূষকের কারণে ঐ শরবত বা পানীয় অনিরাপদ হয়। অতএব, শরবত বা পানীয় তৈরিতে শুধুমাত্র নিরাপদ পানি ও নিরাপদ পানিতে তৈরি বরফ ব্যবহার করুন।

খাদ্যদ্রব্যে সুগন্ধি বা রঞ্জক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রণীত 'খাদ্য-সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার প্রবিধানমালা, ২০১৭' অনুসরণ করুন। ইফতার সামগ্রী যথা পেয়াজু, চপ, বেগুনি, জিলাপি, বুন্দিয়া, ইত্যাদি তৈরিতে অননুমোদিত রঞ্জক, সুগন্ধি বা অন্যান্য সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার করলে মানবদেহে রাসায়নিক দূষকজনিত বিষক্রিয়া হতে পারে। এই প্রেক্ষিতে সুগন্ধি বা রঞ্জক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রণীত 'খাদ্য-সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার প্রবিধানমালা, ২০১৭' অনুসরণ করুন।

পোড়া বা ভেজাল মিশ্রিত তেল দিয়ে ইফতার সামগ্রী ভাঁজলে বা খাদ্যদ্রব্য রান্না করলে তা অনিরাপদ হতে পারে। বিশুদ্ধ বা ভেজালমুক্ত তেল ব্যবহার করুন এবং একই তেল বার বার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ফল, শাকসবজি বা সালাদ জাতীয় খাবার আকর্ষণীয় করার জন্য অননুমোদিত রাসায়নিক দ্রব্য যথা কৃত্রিম রঞ্জক ব্যবহার করলে মানবস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।

এ সকল খাদ্যদ্রব্য আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্যে কোন প্রকার অনঅনুমোদিত রাসায়নিক দ্রব্য বা রঞ্জক ব্যবহার করবেন না। অপরিপক্ক ফল পাকানোর জন্য অননুমোদিত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করলে ফলের গুনগত মান নষ্ট হয় এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশংকা থাকে। ফলমূল পরিপক্ক অবস্থায় সংগ্রহ করুন এবং অপরিপক্ক ফল পাকানোর জন্য কোন প্রকার অননুমোদিত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করবেন না।

বাসি বা পচা ইফতার সামগ্রী ব্যবহার বা বিক্রি করলে অণুজীব ঘটিত বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। বাসি বা পচা খাদ্য উপকরণ দিয়ে খাবার বা ইফতার সামগ্রী তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন। খাদ্যদ্রব্য প্যাকেটকরণে বা মোড়াতে খবরের কাগজ বা ব্যবহৃত কাগজের তৈরি ঠোঙ্গা ব্যবহার করবেন না। কেননা খবরের কাগজে বা ব্যবহৃত কাগজে যে কালি থাকে তাতে রঞ্জক ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য থাকতে পারে।

"নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ যথাযথভাবে অনুসরণ করে নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন অনিরাপদ খাদ্যকে 'না' বলুন"। নিরাপদ খাদ্য বিরোধী কার্যকলাপ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩-এর আওতায় ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।এছাড়াও অন্যান্য বিশেষ আইনে উচ্চতর দণ্ডযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

আরো বলা হয় - বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি,আজম, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট র্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং তদলক্ষ্যে একটি দক্ষ ও কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার 'নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩' প্রণয়ন করে।

আইনটি ০১ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে কার্যকর হয় এবং ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে "বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ" গঠিত হয়।মাঠ পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার খাবারের পাত পর্যন্ত খাদ্য শৃঙ্খলের প্রতিটি ধাপে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত সরকার ও কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত আইন, বিধি ও প্রবিধানমালাগুলো প্রণয়ন করেছে -নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩।নিরাপদ খাদ্য (খাদ্যদ্রব্য জব্দকরণ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ পদ্ধতি) বিধিমালা, ২০১৪।

খাদ্য-সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার প্রবিধানমালা, ২০১৭।নিরাপদ খাদ্য (রাসায়নিক দূষক, টক্সিন ও ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশ) প্রবিধানমালা, ২০১৭।মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা, ২০১৭।খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা ও বিশ্লেষন প্রবিধানমালা, ২০১৭। এবং নিরাপদ খাদ্য (কারিগরি কমিটি) বিধিমালা, ২০১৭।

প্রতিটি খাদ্য উৎপাদক বা খাদ্য ব্যবসায়ীকে উপর্যুক্ত আইন, বিধি ও প্রবিধানমালাসমূহ যথাযথভাবে অনুসরন করে খাদ্য উৎপাদন বা খাদ্য ব্যবসা পরিচালনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, কেননা অন্যথায় নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ তে কঠোর এবং অজামিনযোগ্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এ শাস্তি পাঁচ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড, বিশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে।

এছাড়াও উচ্চতর দণ্ডযোগ্য অপরাধের জন্য Special Power Act, 1974-এর অধীন বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে। মামলা করা যাবে এবং সে ক্ষেত্রে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।এ সকল আইন, বিধি ও প্রবিধানমালা বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।

খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান এবং জনগনকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট ভিজিট করে উক্ত আইন, বিধি ও প্রবিধিমালাসমূহে প্রদত্ত নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কিত আইন-কানুন ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এই সকল বিধি/প্রবিধানমালা সমূহ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে Bangladesh Pure Food Rule, 1967 এর যতক্ষানি এই সকল বিধি/প্রবিধানমালাসমূহের সাথে সম্পর্কিত ততক্ষানি রহিত হয়।নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ ও এর অধীন প্রণীত বিধি/প্রবিধানমালাসমূহ মেনে চলুন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করুন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password