দেশে পুরুষ প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা বেশি

দেশে পুরুষ প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা বেশি

দেশে পুরুষ প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা বেশি। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে শ্রমবাজার তথ্যের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতাধীন শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ এর ডাটার ভিত্তিতে আইএলও সহযোগিতায় এটি প্রকাশ করা হয়।

দেশে পুরুষ প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা বেশি। ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী কর্মক্ষম প্রতিবন্ধীর মধ্যে ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ পুরুষ। অন্যদিকে নারী রয়েছে ৪৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর মধে গ্রামাঞ্চলে প্রতিবন্ধী ৭৪ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে প্রতিবন্ধী রয়েছে ২৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ ছাড়া শ্রমবাজারে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণও কাঙ্ক্ষিত নয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইব্রাহিম খান এবং আইএলওএর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটাইনেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

এছাড়াও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালননা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপঙ্কর রায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে কৃষি খাতে নিযুক্ত আছেন সর্বোচ্চ ৫২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এরপরে সেবায় ৩৬ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং শিল্পে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ।

জাতীয় পর্যায়ে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সপ্তাহে ৩৮ ঘণ্টা এবং শহরে ৪০ ঘণ্টা এবং গ্রামীণ এলাকায় ৩৬ ঘণ্টা কাজ করেন। ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির গড় মাসিক আয় জাতীয় পর্যায়ে ১০ হাজার ৪৭০ টাকা, শহরাঞ্চলে ১১ হাজার ৫২৩ টাকা এবং গ্রামীণ এলাকায় ৯ হাজার ৪১৭ টাকা।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হার ২২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের জন্য ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং নারীদের জন্য ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ ছিল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড.শাহনাজ আরেফিন বলেন, প্রথমবারের মতো হয়ে যাওয়া সার্ভে থেকে কিছু নতুন তথ্য একটি নির্দিষ্ট গ্রুপকে লক্ষ্য করে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবন্ধীরা নিজেরাই নিজেদের উন্নয়নে কাজ করছে। তারা প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কম কাজের সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। কেননা আমরা প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে নিয়ে চলতে পারছি না। তাদের অবহেলা বা দূরে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শিক্ষিত ৩৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ৬২ দশমিক ৮৯ শতাংশ নিরক্ষর ছিল। সর্বোচ্চ পাশের শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রাইমারি সম্পন্ন প্রতিবন্ধী ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আরও কম।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়েছে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ এবং এদের মধ্যে পুরুষ শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ এবং নারী শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক ৩৩ শতাংশ এক থেকে তিন মাসের জন্য প্রশিক্ষণ নেন। এরপরে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ এক সপ্তাহের কম এবং ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ তিন থেকে ৪ সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণ পায়।

নারীদের জন্য ২২ দশমিক ৫৭ শতাংশ এক সপ্তাহের কম সময়ের জন্য, ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ এক থেকে তিন মাসের জন্য এবং ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ চার থেকে ৬ মাসের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পুরুষদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ এক থেকে ৩ মাসের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

এরপর ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ এক সপ্তাহের কম এবং ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ ৬ মাসের বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ পায়। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, জাতীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ধরন অনুযায়ী ২০ দশমিক ৮৭ শতাংশ কৃষি ফসল উৎপাদন এবং সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ তৈরি পোশাকে এবং ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ বিদেশি ভাষায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পুরুষদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কৃষি ফসল উৎপাদন ও সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ নেয়।

তারপরে ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ তৈরি পোশাকে এবং ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। নারীদের জন্য সর্বাধিক ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ কৃষি কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও প্যারামেডিকেল পরিষেবায় ২৭ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং তৈরি পোশাকে ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি প্রতিবন্ধী জনসংখ্যার মধ্যে কর্মে নিয়োজিত শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী নয় ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশ। বেকারত্বের হার প্রতিবন্ধী জনসংখ্যার মধ্যে ছিল জাতীয় পর্যায়ে এক দশমিক ৬৩ শতাংশ। পুরুষদের জন্য এক দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং নারীদের জন্য এক দশমিক ৯৩ শতাংশ।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password