বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক আইডি উধাও হয়ে গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজত থেকে মুক্ত হয়েই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন এ দুই সমন্বয়ক। কিন্তু স্ট্যাটাস দেওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে দুজনের ফেসবুক আইডিই গায়েব হয়ে গেছে।
মুক্তি পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত মাহমুদ। ওই স্ট্যাটাসে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন তারা। তবে এর কিছুক্ষণ পরই তাদের ফেসবুক আইডি উধাও হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে সারজিস বলেন, এ পথ সত্যের, ন্যায়ের পথ, তাই যে কোনো কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে, গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে; ততদিন লড়াই চলবে। দীর্ঘ ফেসবুক স্টাটাসে এই সমন্বয়ক লেখেন, ‘কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না।
আপনারা কথা রাখেননি। আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারা দেশে স্কুল-কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন, মাশরুর তার উদাহরণ।’
ডিবি হেফাজতের বিষয়ে বলেন, ‘৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায় কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত সেগুলো কীভাবে নিবৃত করবেন?’ পুলিশের উদ্দেশে এই সমন্বয়ক লেখেন, পুলিশ ভাইদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলি, এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের ওপর নয়, পুলিশের ওপর নয়, এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার ওপর।
যে পোশাকটাকে ব্যবহার করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার ওপর। ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সাথে, বুকে টেনে নেবো।
মুক্তি পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহও। তিনি তার স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। এই গণগ্রেপ্তার গণঘৃণার নামান্তর। আমাদের মুক্তি তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটিও মুক্তি পাবেন। ‘এই গণগ্রেপ্তার কেবল নিরপরাধ মানুষের অধিকার হরণ নয়, বরং আমাদের সমগ্র সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন।
এটি মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতি এক ভয়ানক আঘাত। আমাদের এই আন্দোলন শুধুমাত্র ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়, বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বাসায় যাওয়ার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই ঘোষণা দেন তারা। পরবর্তীতে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আর দেখা যায়নি। এ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। এর আগে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন