মির্জা ফখরুল-আব্বাসের আপাতত মুক্তি মিলছে না

মির্জা ফখরুল-আব্বাসের আপাতত মুক্তি মিলছে না
MostPlay

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্ট জামিন দিলেও আপাতত মুক্তি মিলছে না তাদের। এ দুজনের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আগামী রবিবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। সে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট আদালতে ফখরুল-আব্বাসের আইনজীবীদের জামিননামা দাখিল না করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

উভয়পক্ষের শুনানির পর আজ বুধবার এ আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম। ফলে আপাতত ফখরুল-আব্বাসের কারামুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

ফখরুল-আব্বাসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সগির হোসেন লিয়ন, কায়সার কামাল। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গত ২১ ডিসেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদনটি ২৬ জানুয়ারি শুনানির জন্য রেখেছেন। কিন্তু সেদিনই তাদের জামিনের অন্তর্বর্তী আদেশ চেয়ে আরেকটি আবেদন করা হলে ওই আবেদনটি খারিজ করেন দায়রা জজ।

মূল জামিন আবেদন বিচারাধীন রেখে ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইাকোর্টে আবেদন করা হয়। আর সে আবেদনে বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট জামিন দিতে পারেন কিনা সে প্রশ্ন রেখে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে হাইকোর্টের আদেশটি অন্যায্য। তাই জামিনের আদেশটি স্থগিত করার আরজি জানাচ্ছি। রাষ্ট্রপক্ষের পর শুনানিতে এসে ফখরুল-আব্বাসের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন গত ২১ ডিসেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালতের খারিজ আদেশটি পড়ে শোনাচ্ছিলেন।

এর মধ্যেই চেম্বার বিচারপতি বলেন, আদেশটি আমার সামনে আছে। আপনি দেখান, মূল জামিন আবেদন বিচারাধীন রেখে অন্তর্বর্তী আদেশের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যে আবেদন করেছেন, সেটি বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট জামিন দিতে পারেন কিনা। আদালতের এ প্রশ্নে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ফের দায়রা জজ আদালতের আদেশ পড়া শুরু করলে আদালত তাকে থামিয়ে বলেন, আবেদনটি রবিবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকার শীর্ষে রাখছি। সে পর্যন্ত জামিন স্থগিত।

এ সময় ফখরুল-আব্বাসের আইনজীবীরা সমস্বরে আপত্তি জানিয়ে বলেন, আপনি যে প্রশ্ন রেখেছেন সে জবাব আমাদের কাছে আছে। শুনে যদি আপনি সন্তুষ্ট না হন, তখন আদেশ দিতে পারেন, তার আগে না। তখন চেম্বার বিচারপতি বলেন, বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ফয়সালা হওয়া দরকার। তাই আমি মনে করছি সেখানেই বিষয়টির সুরাহা হোক। এ সময় ফখরুল-আব্বাসের আইনজীবীরা আরজি জানান, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি রবিবার শুনানির জন্য রাখলেও যেন জামিন স্থগিত করা না হয়।

এ আরজির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন বিচারাধীন রেখে স্থগিতাদেশ না দিলে তো আসামিরা বের হয়ে যাবে। এটি তো হতে পারে না। তখন বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, আমরা মুচলেকা দিতে চাই সংশ্লিষ্ট আদালতে তাদের (ফখরুল-আব্বাসের) জামিননামা দাখিল করা হবে না। তারপরও যেন হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করা না হয়।

তখন চেম্বার আদালত বিবাদীদের (ফখরুল-আব্বাসের পক্ষে তাদের আইনজীবী) জামিননামা দাখিল না করার নির্দেশ দিয়ে আদেশ দেন। বিস্ফোরক দ্রব্য মজুদ, পুলিশের ওপর হামলার উসকানি ও নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগের মামলায় গতকাল মঙ্গলবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের অন্তবর্তী জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। কেন তাদের নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। জামিন আদেশের পর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। অন্য কোনো মামলায় তারা দণ্ডিতও নন। ফলে তাদের মুক্তিতে বাধা নেই। আর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জামিন স্থগিত করতে আপিল বিভাগে যাবে রাষ্ট্রপক্ষ।

বুধবার সকালেই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ফখরুল-আব্বাসের জামিন স্থগিতের আবেদন করলে দুপুরে শুনানির পর আদেশ হয়। ঢাকায় গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ও স্থান নির্ধারণ নিয়ে উৎকণ্ঠা-উত্তেজনার মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে জমায়েত হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছোড়া হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে তখন কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ।

গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে। সেদিন ফখরুলকে গ্রেপ্তার না করলেও পরদিন রাতে বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়, একই রাতে আটক করা হয় মির্জা আব্বাসকেও। পরদিন ৯ ডিসেম্বর পুলিশের উপর হামলা ও উসকানি দেওয়ার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঠানো হয় আদালতে। আদালতে তাদের পক্ষে জামিন আবেদন হলেও তা নাকচ করে পাঠানো হয় কারাগারে।

এরপর ১২ ডিসেম্বরও তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এ সময়কালে তদন্ত কর্মকর্তা কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশি হেফাজতে চাইলেও রিমান্ড নামঞ্জুর করেন আদালত। পরে ১৫ ডিসেম্বর ফের নাকচ হয় তাদের জামিন আবেদন। এরপর গত ২১ ডিসেম্বর আবার তাদের মূল জামিন আবেদন বিচারাধীন রেখে আরেকটি আবেদন করে আইনজীবীরা।

সে আবেদনটি মগহানগর দায়রা জজ নামঞ্জুর করলে গত সোমবার হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। মামলার এফআইআর-এ দুজনের নাম না থাকা, দায়রা জজ আদালত থেকে মামলার এফআইরভুক্ত দুই আসামির জামিন, ফখরুল-আব্বাসের বয়স, অসুস্থতা, সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে জামিন চাওয়া হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password