ভুটানি তরুণীর নাক ঠিক হল বাংলাদেশে

ভুটানি তরুণীর নাক ঠিক হল বাংলাদেশে
MostPlay

ক্যান্সারে নাকে পচন ধরেছিলো ভুটানের কারমা দেমার। ভারতের টাটা মেমোরিয়ালে দুবার অস্ত্রোপচার করেও সুফল পাননি। শেষ পর্যন্ত সুস্থ নাক ফিরে পেলেন বাংলাদেশে এসে। এর পুরো কৃতিত্ব শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের। ১২ দিনে অনেকটাই সুস্থ কারমা, এখন অপেক্ষা দেশে ফেরার।

ভুটানের তরুণী কারমা দেমা। তাঁর চিকিৎসা চলছে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ইতিমধ্যে তাঁর বড় ধরনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকেরা ক্যানসারে আক্রান্ত কারমার ক্ষতিগ্রস্ত নাক ঠিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশের সরকারের মধ্যস্থতায় কারমা দেমার (২৩) চিকিৎসা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানে। এমন ঘটনা এর আগে বাংলাদেশে ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, দুই দিক থেকে ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, কারমা নিজ দেশে এবং ভারতের কলকাতার টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।তবে সুস্থ হননি। ভারতের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ না হওয়া রোগী বাংলাদেশে এসেছেন, এমন সাধারণত দেখা যায় না। বাংলাদেশেরই বহু রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যান।

দ্বিতীয়ত, একজন বিদেশি রোগী দুই দেশের সরকারের মধ্যস্থতায় এ দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত রোববার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৩ তলায় গিয়ে কারমা ও তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। দুজনই কথা বললেন নিঃসংকোচে। জানালেন, কারমাকে নিয়ে খবর প্রকাশে তাঁদের আপত্তি নেই।

চিকিৎসকেরা জানান, ১০ বছর আগে কারমার নাকের গহ্বরে ক্যানসার শনাক্ত হয়। তাঁর চিকিৎসা ভুটানে সম্ভব ছিল না। তিনি টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ওই হাসপাতালে তাঁকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁর নাকের ভেতরে পচন দেখা দেয় এবং নাকের আকার-আকৃতি অস্বাভাবিক হয়ে যায়।

নাকের আকার ঠিক করার জন্য নতুন করে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন কারমা। সেখানে তাঁর নাকে দুবার অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তিনি আর আগের স্বাভাবিক চেহারা ফিরে পাননি। চিকিৎসকদের ভাষায়, নাক পুনর্গঠন হয়নি। পরে তিনি ভুটান চলে যান।

--কারমা যেভাবে বাংলাদেশে-- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকার যৌথভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মাধ্যমে একটি প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। সামন্ত লাল সেন ১৪ সদস্যের এই চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে ছিলেন।

তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর জাতীয় সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করছিলেন। সাত দিনব্যাপী এই ক্যাম্পে ১৬টি জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ওই ক্যাম্পে নাকের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন কারমা। বিদেশি নাগরিককে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে এনে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা আছে।

এরপর ভুটান ও বাংলাদেশ সরকার কারমার চিকিৎসা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে করার বিষয়ে একমত হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ৯ জানুয়ারি কারমার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁর শরীরের তরুণাস্থি ও হাতের চামড়া নিয়ে নাক পুনর্গঠন করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারে সময় লেগেছিল আট ঘণ্টা। নেতৃত্বে ছিলেন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ চন্দ্র দাস। প্রদীপ চন্দ্র দাস  বলেন, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। কারমা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘নাক সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন করতে আরও কয়েকবার সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার করতে হবে।’ ভুটানি এই রোগীকে দেশে আনা থেকে চিকিৎসা দেওয়া—সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সামন্ত লাল সেন।

মন্ত্রিত্ব গ্রহণের পর গত রোববার প্রথম দিন মন্ত্রণালয়ের কাজ সেরে দুপুরে তিনি শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছিলেন কারমাকে দেখতে। সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি এই জন্য বড় ঘটনা যে বিদেশি রোগী আমাদের দেশে চিকিৎসা নিতে এসেছে। দুই দেশের সরকার এই চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত। আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবা নিশ্চয়ই উন্নত হয়েছে।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password