বিএনপির ৩১ দফা মূলত 'রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা': স্থানীয় অনেক কর্মীর সুষ্পষ্ট ধারণা নেই

বিএনপির ৩১ দফা মূলত 'রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা': স্থানীয় অনেক কর্মীর সুষ্পষ্ট ধারণা নেই

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)এর ৩১ দফা মূলত 'রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা' হিসেবে পরিচিত। এই দফার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক মুক্তি আনা এবং একটি জনকল্যাণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এই ৩১ দফা রূপরেখা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে যতটা গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছে, তৃণমূলের কর্মীদের কাছে তা সেভাবে পৌঁছে নি।

দোহার উপজেলা বিএনপির স্থানীয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মী বা নেতা তারা কিন্তু বলতে পারেনি ঘোষিত ৩১ দফা কি কি, কারো কাছে ৩১ দফার বুকলেটও নেই। বিএনপির স্থানীয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত ১০ জন কর্মী বা নেতাকে ঘোষিত ৩১ দফা কি কি জানতে চাওয়া হয় কিন্তু দুজন ব্যতীত অন্য ৮ জনই কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।

তাছাড়া বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হলেও, ইউপি-মেম্বার নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙ্গিয়ে প্রচার চালাচ্ছে স্থানীয় কিছু নেতা, যা স্থানীয় নেতারা তাদের ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থকে দলের বৃহত্তর নীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিচ্ছে। কেননা ইউপি-মেম্বার নির্বাচন স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতা, প্রভাব এবং কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক সুযোগের একটি উৎস। দলের আনুষ্ঠানিক বয়কট সত্বেও, কিছু নেতা ব্যক্তিগত ভাবে বা তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী দেখা যাচ্ছে, কারণ এটি তাদের স্থানীয় ক্ষমতা ধরে রাখার বা বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হতে পারে, তাদের এই ব্যক্তিগত উদ্যোগকে একটি বৈধ বা দলীয় সমর্থিত রূপ দেয়া, যা দলের উচ্চ পর্যায় থেকে সরাসরি অনুমোদন না থাকারই কথা।

এই পরিস্থিতিগুলো যে মূল সমস্যাগুলির দিকে ইঙ্গিত করে, সেগুলো হলো:

সংগঠনগত দুর্বলতা:

একটি রাজনৈতিক দলের মেরুদণ্ড হলো তার তৃণমূলের কর্মী বাহিনী। যদি তারাই দলের ঘোষিত মূল কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত না থাকেন, তাহলে দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এটি নির্দেশ করে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তথ্য প্রবাহের একটি বড়ো ধরনের বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।

দৃষ্টিভঙ্গির অভাব:

কর্মীরা যদি দলের মূল নীতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার না হন, তাহলে তারা দলীয় কার্যক্রমে পুরোপুরি জড়িত হতে পারবেন না। তাদের মধ্যে এক ধরনের দিকনির্দেশনাহীনতা কাজ করতে পারে।

জনগণের সাথে সংযোগের ঘাটতি:

৩১ দফা হলো বিএনপির 'রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা' এবং এটি জনগণের কাছে দলের বার্তা পৌঁছে জড়িত একটি প্রধান মাধ্যম। যদি কর্মীরাই এটি না জানেন, তাহলে তারা কীভাবে সাধারণ ভোটারদের কাছে দলের ভিশন তুলে ধরবেন? এর ফলে দল জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে।

প্রচারের দুর্বলতা:

বুকলেট বা লিফলেট না থাকা মানে প্রচার সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ বা বিতরণে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। ডিজিটাল যুগেও অনেক স্থানীয় কর্মী বা সাধারণ মানুষের কাছে মুদ্রিত সামগ্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আস্থার সংকট:

ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীরাই যদি দলের প্রধান কর্মসূচি সম্পর্কে না জানেন, তাহলে এটি তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে। এটা দলের উপর তাদের আস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

দু’জনের ব্যতিক্রমী অবস্থান:

দুজন স্থানীয় কর্মী বা নেতা ৩১ দফা সম্পর্কে বলতে পেরেছেন, যা প্রশংসনীয়। এর অর্থ হতে পারে যে তারা ব্যক্তিগত ভাবে এ বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন, অথবা তারা এমন একটি সার্কেলের অংশ, যেখানে এই তথ্যগুলো নিয়মিত আলোচনা হয়। তবে, এই দুজন মাত্র ব্যক্তির জ্ঞান সামগ্রিক চিত্রকে ঢেকে দিতে পারে না।

সমাধানের পথ:

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিএনপির উচিত হবে: ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: স্থানীয় পর্যায় এর সকল কর্মী ও নেতাদের জন্য ৩১ দফা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা। শুধু মুখস্থ করানো নয়, এর প্রতিটি দফার গুরুত্ব, উদ্দেশ্য এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়া।

সহজলভ্য প্রচার সামগ্রী:

৩১ দফার সহজবোধ্য বুকলেট, লিফলেট এবং পোস্টার পর্যাপ্ত পরিমাণে ছাপিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। ডিজিটাল ফরম্যাটেও এগুলো সহজলভ্য করা।

নিয়মিত আলোচনা ও ফিডব্যাক সেশন:

স্থানীয় কমিটিগুলোতে ৩১ দফা নিয়ে নিয়মিত আলোচনা সেশনের আয়োজন করা, যেখানে কর্মীরা প্রশ্ন করতে পারবেন এবং নিজেদের মতামত দিতে পারবেন।

মনিটরিং ও জবাবদিহিতা:

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে এই বিষয়গুলো মনিটরিং করা এবং নিশ্চিত করা যে তথ্যগুলো সঠিকভাবে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে এবং কর্মীরা সেগুলো আত্মস্থ করতে পারছেন। স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা এই রূপরেখা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার জন্য লিফলেট বিতরণ ও কর্মী সমাবেশের মতো কর্মসূচি নিলে, যা হয়তো ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। একটি রাজনৈতিক দলের সাফল্যের জন্য তার তৃণমূলের কর্মীদের ক্ষমতায়ন এবং সঠিক তথ্য প্রবাহ অত্যন্ত জরুরি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password