ভুল চিকিৎসায় নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল এবং অস্ত্রোপচারে জড়িত চিকিৎসকদের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন আঁখির সহপাঠীরা। এ সময় তারা বলেন, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও ডা. সংযুক্তা সাহার প্রতারণার শিকার হয়েছে আমাদের সহপাঠী। কেমন চিকিৎসা দিলে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলার পাশাপাশি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের দাবি করছি। একই সঙ্গে চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার গ্রেপ্তার ও তার চিকিৎসা নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। আজ রোববার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ল্যাব এইড হাসপাতালের সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ দাবি জানান।
এর আগে দুপুর সোয়া ২টার দিকে মারা যান ভুক্তভোগী মাহবুবা রহমান আঁখি। আঁখির সহপাঠী ইডেন কলেজের ছাত্রী মুনিরা আনজুম বলেন, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কত বাড় সাহস তাদের তারা এমন স্পর্ধা দেখাচ্ছে। তারা বলে কিছুদিন পর সবাই ভুলে যাবে, তোমাদের কত টাকা হয়েছে। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে গেলে তোমাকে দেখে নিবে। এভাবে আমাদের শিশুকে ও বোনকে হত্যা করার পর হুমকি দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমার সহপাঠী আঁখি মারা গেল, তখন সবাই তাকে দেখতে আসছে, তার খোঁজ নিচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেন্ট্রাল হাসপাতালের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি, খোঁজখবরও নেয়নি। এমনকি যার আশ্বাসে আঁখি ঢাকায় এসেছিল সেই ডাক্তার সংযুক্তা সাহাও একদিন দেখতে আসেনি। আমরা মনে করি, সেন্ট্রাল হাসপাতাল বা ডা. সংযুক্তা কেউই এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না।’
আরেক সহপাঠী নাজমুর হাসান বলেন, ‘আমাদের সহপাঠীর নরমাল ডেলিভারি করানোর কথা ছিল। পরে কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই সিজার করা হয়। কিন্তু কত বড় কসাই হলে অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর মলদ্বার, মূত্রনালি কেটে ফেলে। লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে। গত কয়েকদিনে আঁখিকে ৩৩ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। আমরা মনে করি, আঁখি ডা. সংযুক্তা সাহার প্রতারণার শিকার হয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে।’
সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নরমাল ডেলিভারির তথ্য পেয়ে গত ৯ জুন কুমিল্লা থেকে সেন্ট্রালে আসেন আঁখি। কিন্তু যে চিকিৎসকের অধীনে সন্তান প্রসব করার কথা, সেটি না হয়ে উল্টো ভুল চিকিৎসার শিকার হন তিনি। এতে করে জন্মের একদিন পরই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ল্যাব এইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয় আঁখিকে।
সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মারা যান তিনি। এর আগে এ ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তারা। এ ঘটনায় গত শুক্রবার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অভিযানে হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু ঘাটতি দেখতে পান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জরুরি চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় আইসিইউসহ প্রতিষ্ঠানটিতে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধের নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর। পাশাপাশি ডা. সংযুক্তা সাহাকে ওই প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ সেবা দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন