১০৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু কথা

১০৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু কথা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। অপরাজনীতি, প্রশাসনিক সুর্বলতাসহ নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত এই ক্যাম্পাস। পাশাপাশি নৈতিক স্খলন তো আছেই! শিক্ষার্থীদের ছিনতাই, চাঁদাবাজির খবর শুনলে সুস্থ স্বাভাবিক যে কারোরই ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগার কথা। অবশ্য দেশজুড়েই এই কালচার গড়ে ওঠছে।

কিশোর গ্যাং, টিকটকার গ্যাং, শিশু গ্যাং, নবজাতক গ্যাংসহ স্থানীয় রাজনীতিতেও কোমলমতি শিশুদের অযাচিতভাবে জড়ানোর সংস্কৃতি দেশে খুব সুন্দরভাবেই বিকশিত হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের অস্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হওয়ায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সচেতন মহলের দৃষ্টির কেন্দ্রে থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের জাতীয় চেতনা নির্ধারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী।

কিন্তু, শুধু ‘'চেতনা” আর “গর্ব” দিয়ে তো আর আধুনিক যুগের একটি বিশ্ববিদ্যালয় বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারে না। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্যানুযায়ী, University is derived from the Latin phrase universitas magistrorum et scholarium, which roughly means "community of teachers and scholars.” অর্থাৎ, শিক্ষার্থী (জ্ঞানপিপাসু) এবং শিক্ষকদের (জ্ঞানী) একটি সম্প্রদায় হলো বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে মূল উপজীব্য বিষয় গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই উচ্চশিক্ষা আর গবেষণার পরিবেশ কতটুকু ধরে রাখতে পারছে সেটাই মূল ভাবনার বিষয়। একসময়ের প্রয়োজনীয় ছাত্ররাজনীতি আজ কি শুধুই লেজুড়বৃত্তি, বোঝা (burden) আর অপ্রয়োজনীয় কী না সেই বিষয়েও আলোচনার সুযোগ আছে।

গণতন্ত্রহীনতা (নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন না হওয়া) এবং অপরাজনীতির (লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি এবং হলের রাজনৈতিক আবহ) প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য-শিক্ষা এবং গবেষণাকেই ব্যাহত করছে কী না সেই বিষয়েও আমার সন্দেহ আছে। অবশ্য, আমার চেয়ে বড়রা আরও ভালো বলতে পারবেন।

বিতর্ক থাকলেও বৈশ্বিক র‍্যাংকিং-কে পুরোপুরি অস্বীকারের সুযোগ নেই। ১০৩ বছর বয়সী একটি রাষ্ট্রের ভিত্তি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি আশানুরূপ স্থান অর্জন করতে পেরেছে? এর উত্তর আমার মতো করে ব্যাখ্যা করছি আমি। অপরাজনীতির প্রভাব, প্রশাসনিক নানান সংকট (আবসন, নিরাপত্তা) থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের ৫০০ টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতে থাকা খুব একটা খারাপ মনে হয় না আমার কাছে।

এর মধ্যেই অনুষদ (faculty) ভিত্তিক র‍্যাংকিংয়ে আমাদের ‘সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুষদ বিশ্বের সেরা ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও স্থান পেয়েছিল গতবছর। আমার মতো অনেকেরই ধারণা, অপরাজনীতির প্রভাব কেটে গেলে, রাষ্ট্রের সুনজর আর সদিচ্ছা বৃদ্ধি পেলে আমরা খুব সহজেই র‍্যাংকিয়ে আরও এগিয়ে যেতে পারবো।

হলের আবাসিক সংকট, ক্যাম্পাসের অপরাজনৈতিক প্রভাবসহ নানান দুর্বল দিকগুলোকে বাদ দিলে অ্যাকাডেমিক জায়গায় আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পথিকৃৎ হয়েই টিকে আছে (লড়াই করছে বলতে হয়)। আমাদের বিশ্বমানের অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের হাত ধরে এখনও লড়াই করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

তবে খুব সহজেই অনুমান করা যায়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর ক্রমবর্ধমান উনয়ন আর গবেষণাক্ষেত্রে প্রভাবের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতে হবে শীর্ষস্থান ধরে রাখার জন্য। দেশটা আমাদেরই। ঘুমে কিংবা জাগরণে এই দেশটাই আমাদের ধ্যান, জ্ঞান।

দেশের সকল সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা যেমন আমাদের হাত ধরেই দূর হবে, তেমনি আমাদেরই পরম আপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা আমাদেরই দূর করতে হবে। লেখনি, আলোচনা-সমালোচনা তারই অংশ। আমরা সচেতন হলেই দেশ যেমন হবে দুর্নীতিমুক্ত, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ও টিকে থাকবে চ্যালেঞ্জিং এ লড়াইয়ে, বাড়বে শিক্ষা আর গবেষণার মান।

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের অন্যান্য সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বুকে জায়গা করে নিলেই আমরা কেবল গর্বিত হতে পারবো একজন বাংলাদেশি হিসেবে। আমাদের সচেতনতা আর নৈতিকতার জাগরণ ঘটুক খুব দ্রুত। তা না হলে দিন দিন অন্ধকারে চলে যাবে সবকিছুই, সব।

লেখক, মো.রিদওয়ান আল হাসান শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password