জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? কে নিবে ক্ষতির দায়?

জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? কে নিবে ক্ষতির দায়?
MostPlay
সম্পাদকীয়ঃ ভোর ৫.৩০ মিনিট । পিঠের দিকে হঠাৎ প্রচন্ড একটা ব্যথায় ঘুম ভেঙ্গে গেলে, তাড়াতাড়ি উঠে নিজেকে সামলে নিয়ে ওয়াশ রুমে গেলাম। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখি বাড়িওয়ালা রিয়াজ ভাই আমাকে ডাকছে। ভোরবেলাতে বড়িওয়ালার আগমনে আমি আসলে চিন্তিত হয়ে পড়ি।
জানতে চাইলাম, ‘ভাই কি হয়েছে?’
প্রতিউত্তরে তিনি জানালেন, ‘আপনার সাথে, আপনার যে ভাতিজা থাকে, ওর নাকি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। নিচে একটি লোক এসেছে আপনাকে নিতে। আপনি তাড়াতাড়ি যান’। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল আমার। এমন ঘটনার জন্য একেবারেই অপ্রস্তুত ছিলাম আমি।

নিচে গিয়ে দেখি একজন ভদ্রলোক আমাকে জানালেন যে, ‘আপনার ভাতিজার গুরুতর অবস্থা। তিনি গাজীপুর তায়রুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন। আপনাকে এক্ষুণি যেতে হবে’।
কোন রকম কাল বিলম্ব না করে আমি ওনার সাথে ওনার বাইকে করে বেরিয়ে গেলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

যেতে যেতে তিনি জানালেন যে, ‘আপনার ভাতিজাকে ছিনতাইকারীরা জখম করে দিয়েছে। ও তো বাইকে বসতেই পারে না। কোন রকমে হাসপাতালে রেখে এসেছি আমি’।

কথা বলে জানতে পারলাম ওনার নাম পলাশ এবং তিনি পেশায় একজন বাইক রাইডার। আল্লাহর দরবারে হাজারো শুকরিয়া এবং দোয়া এই ভাইটির জন্য। মহান আল্লাহ ওনাকে ওনার এই ভালো কাজের সর্বোত্তম প্রতিদান দিন। (আমিন)।

হাসপাতালে গিয়ে দেখি, তৌহিদ (আমার ভাতিজা) গুরুতর আহত অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে। দুটি ক্ষতস্থানে প্রাথমিকভাবে ব্যান্ডেজ দিয়ে রক্ত বন্ধ চেষ্টা করেছে ডাক্তার। কিন্তু ক্ষতস্থান তো মোট ১১ টা। কত জায়গার রক্ত বন্ধ করবে। পুরো শরীর রক্তাক্ত, নাকের ভিতরে রক্ত। চোখ-মুখ, সারা গাঁ জুড়ে রক্ত আর রক্ত। চোখের পানি আঁটকাতে পারিনি। অঝরে যেন ঝরে যাচ্ছে। কি যে কষ্ট আহ। তারপরেও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে, নিজেকে শান্ত করে, তৌহিদকে বললাম, ‘আব্বু, ঠিক হয়ে যাবে, এই তো আমি চলে এসেছি’।

ডিউটিরত ডাক্তার জানালেন, ‘তাড়াতাড়ি এই ইনস্ট্রুমেন্টগুলো ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসুন। সেলাই দিতে হবে। আর কাউন্টারে অপারেশন বাবদ ২০০০ টাকা জমা দিবেন’।

আমি বললাম, ‘স্যার, যা করা লাগে আপনি তাড়াতাড়ি করুন। কি লাগবে আমাকে বলুন, আমি সব এনে দিচ্ছি’। আমি তড়িঘড়ি করে পাশেই হাসপাতালের নিজস্ব ফার্মেসী থেকে প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত সকল ইনস্ট্রুমেন্ট এনে দিলাম।

ডাক্তার সাধ্যমত চেষ্টা করে কাটা ক্ষতস্থানগুলো সেলাই করে দিলেন। ১১টি বড় ক্ষতস্থানে অসংখ্য সেলাই এবং ছোট ক্ষতস্থান গুলো পরিস্কার করে দিলেন ডাক্তার। অপারেশন শেষে প্রেসক্রিপশনে ঔষধ ও সুস্থতার জন্য পরামার্শ দিয়ে আমাদের রিলিজ দিলে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় আসার পথে দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার এবং আমার অত্র এলাকার একজন বড় ভাই, সাংবাদিক নাজমুল হাসান পদ্য ভাইয়ের সাথে দেখা হলে তিনি তৌহিদের অবস্থা গুরুতর দেখে বাসায় আসেন।

পরে পদ্য ভাইয়ের সহযোগীতায় পার্শবর্তী থানায় (গাছা থানা-গাজীপুর) গেলে, ডিউটিরত অফিসার বিষয়টি ঘটনা স্থলের আওতাধীন থানায় (বাসন থানা-গাজীপুর) অভিযোগটি দায়ের করতে পরামর্শ দেন। সময়ক্ষেপন না করে আমি আর সাংবাদিক পদ্য ভাই উক্ত থানায় গেলে পদ্য ভাইয়ের সহযোগীতায় বিষয়টির সাধারণ ডায়েরী করা হয়।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, গনাতান্ত্রিক দেশে কেন এমন হলো? কেন মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নাই? স্বাধীন এই দেশে একজন সাধারণ নাগরিক কেন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না? প্রতিনিয়ত এমনই ঘটনা বার বার কেন ঘটছে? আজকে আমার আপনজনের সাথে এমন ঘটনা ঘটল। কালকে আরেকজনের সাথে ঘটবে না বা আমার-আপনার সাথে ঘটবে না, এটার নিশ্চয়তা কে দিবে?

আজ তো এই ছেলেটি মারাও যেতে পারতো? কেউ কি নিতো এটার দায়ভার? কেউ কি নিতো ওর পরিবারের দায়িত্ব? গনতান্ত্রিক এই দেশে কেউ কি দিতে পারতো তার জীবনের দাম? হ্যা, সে মরেনি। বেঁচে আছে, কিন্তু কেউ কি হয়েছে ওর শরীরের যে অসংখ্য ক্ষত আর ব্যথা আছে তার ভাগিদার?

তাহলে এ কেমন স্বাধীন দেশ? এ কেমন স্বাধীন রাস্ট্র। যে খানে জীবনের নিরাপত্তার জন্য মাথা ঠুকে মরতে হয়। রাস্তায় উঠলে প্রাণটা হাতে নিয়ে বের হতে হয়?

ঘটনার বিবরণঃ ‘গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে (আনুমআনিক ৩.৪৫) রিক্সাযোগে বাসার উদ্দেশ্যে সাইনবোর্ড আসার পথে, উক্ত রিক্সায় যাত্রীবেশে ২ জন ছিনতাইকারী পথিমধ্যে (ভোগড়া, বাইপাস-বর্ষা সিনেমা হলের পাশে) নেমে যাওয়ার জন্য রিক্সা থামিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। কিছু বলে ওঠার আগেই আহত করে, কাছে থাকা মোবাইলটা নিয়ে ফেলে রেখে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। আহত তৌহিদ পাশ দিয়ে চলাচলরত লোকজনকে ডাকলেও কেউ সাড়া দিয়ে একটু মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি ওর দিকে। পরে নিজেই মনোবল নিয়ে এক বাইক রাইডার ভাইয়ের (পলাশ) সহযোগীতায় হাসপাতালে যায় তৌহিদ’।

যা ঘটে গেল, তা খুবই খারাপ হয়েছে। শুধু আমার বেলায়ই নয়। প্রশ্ন থেকে যায় তবুও, ‘আর কত ঝরবে রক্ত, কত অশ্রু’?

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password