আজ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী
MostPlay

আজ ২৮ মে। আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী । ১৯৭৬ সালের এই দিনে দেশ ও দেশের বাহিরের অগণিত ভক্ত ও শিল্পানুরাগীদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষ চিত্রকর্মের জন্য সারা বিশ্বের কাছে খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম হন।

দেশ বরেন্য এই চিত্র শিল্পী ১৯১৪ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলায় জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম ছিল তমিজ উদ্দিন। পেশায় ছিলেন দারোগা। মা জয়নাবুন্নেছা গৃহিনী। নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছোট বেলা থেকেই চিত্রকর্মের প্রতি ছিল অগূঢ় আগ্রহ। কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান জয়নুল আবেদিন।

এরপর থেকে সাধারণ পড়াশোনায় তার মন বসছিলোনা। যার কারনে ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়াশোনা বাদ দিয়ে চিত্রকলার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

শিল্পের প্রতি জয়নুলের আগ্রহ দেখে তার মা নিজের গলার হার বিক্রি করে দিয়ে জয়নুলকে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি করিয়ে দেন। মায়ের ভালোবাসার সেই ঋন শোধ করতে গিয়েই পরবর্তীতে দেশের স্বনামধন্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন জয়নুল আবেদিন।

১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একটি শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভূত হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণ বাড়িতে মাত্র ১৮ জন ছাত্র নিয়ে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউটের যাত্রা শুরু করেন জয়নুল।

১৯৫১ সালে এটি সেগুনবাগিচায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৬ সালে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট শাহবাগে স্থানান্তর করার পর ১৯৬৩ সালে এটি একটি প্রথম শ্রেণীর সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ঐসময় এটির নামকরণ করা হয় পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। আর স্বাধীনতার পর এটির নাম পাল্টিয়ে রাখা হয় বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৮৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই সরকারি কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত হয়। এটিই বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। শুধু চারুকলা অনুষদ নয় তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালাও গড়ে তোলেন।

দেশের সুন্দর প্রতিষ্ঠায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের অন্যসব বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের যাত্রা । তিনি আমাদের সেই বাতিঘর যেখার থেকে আমরা দেখি গণমানুষের হাজার বছরের আর্তিকে।

পেশায় একজন শিক্ষক হলেও চিত্রকর্মে ১৯৭৭ সালে তিনি পেয়েছিলেন স্বাধীনতা পুরষ্কার।

 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password