মাতাররবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক) ১০ মেগা প্রকল্পের একটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এর অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো বাংলাদেশের একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি মহেশখালী মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬০০ মেগাওয়াটের মোট দুটি ইউনিট তৈরি হবে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট অর্থাৎ ৬০০ মেগাওয়াট এবং একই বছরের জুলাইতে দ্বিতীয় ইউনিট আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে।
সিপিজিসিবিএল জানায়, প্রকল্পে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ও পানি শোধন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।
কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী গোলাম আহমেদ জানান, এখন ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০০-৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে যা জাতীয় গ্রেডে যোগ হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতায় ২৫/৪১ এমভিএ ক্ষমতার ১৩২/৩৩ কেভি সঞ্চালন উপকেন্দ্র, ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, ১০ এমভিএ ক্ষমতার ৩৩/১১ কেভি বিতরণ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে সাড়ে তিন বছর। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি জুলাই ২০১৪ হতে জুন ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো। বর্তমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মূল প্রকল্প ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় ৫১,৮৫৪.৮৮ কোটি টাকা হয়েছে। ২০২৪ সালে উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও শনিবার (২৯ জুলাই ২৩) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। এই ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। একই দিন দুপুর ১২টার দিকে এই ইউনিটের পরীক্ষামূলকভাবেবিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়।
মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক জানান, ১ হাজার ৬০৮ দশমিক ৪৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৩৫০ মিটার প্রস্থ ও ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার চ্যানেল, সি-ওয়াল সহ আনুষঙ্গিক ফ্যাসিলিটিস নির্মাণ হবে। এছাড়া পাওয়ার প্ল্যান্ট এরিয়া ও টাউনশিপের জন্য ভূমি উন্নয়ন, জেটি, কোল ইয়ার্ড ও চিমনি নির্মাণ, ১২’শ মেগাওয়াট ক্ষমতার আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট ও আনুষঙ্গিক ফ্যাসিলিটিজ নির্মাণ। ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় টাউনশিপ নির্মাণ করা হবে। মাতারবাড়ি হবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎহাব। আর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে সেখানে গড়ে তোলা হবে আধুনিক উন্নত শহর। এইসব পরিপূর্ণ করতে তাই কাজের মেয়াদ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন