ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় টিআইবি

ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় টিআইবি

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ওপর বর্বরোচিতো হামলার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছে সংস্থাটি।রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খাস জমি, অবৈধ বালু উত্তোলন ও ইটভাটাসহ সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে দুর্নীতি ও অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাটের ইউএনওর অনমনীয় অবস্থানের কারণে এ জাতীয় হামলা হয়ে থাকতে পারে। এ ধরনের একটি লোমহর্ষক ও উদ্বেগজনক ঘটনায় যেভাবে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তির প্রাথমিক 'স্বীকারোক্তির ওপর নির্ভর করে একে ‘নিছক চুরি’ এবং একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে প্রচার করা হচ্ছে তা খুবই হতাশাব্যঞ্জক ও সন্দেহজনক।

আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এভাবে বেশ কিছুদিন ধরে তদন্ত শেষ করার আগেই সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছেন। এটা কর্মদক্ষতার প্রমাণ নয়, বরং আইনি প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।

এমন আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এই প্রক্রিয়ায় পেছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়ে তারা আড়ালেই থেকে যায়। তদন্তসংস্থার দায়িত্ব তদন্ত করা, মামলার দায় বা রায় ঘোষণা করা নয়। আমরা এই অপসংস্কৃতির অবসান চাই। একজন সরকারী কর্মকর্তার ওপর হামলার পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী, দুর্নীতিসহায়ক ও স্বার্থান্বেষীদের কোনো ভূমিকা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক তদন্ত ও বিচারের দৃষ্টান্ত না থাকায় সংশ্লিষ্ট মহল ঘোড়াঘাটের ইউএনওর ওপর হামলা করার সাহস পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে অনেক স্পর্শকাতর ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন যেমন আলোর মুখ দেখেনি, তেমনি জড়িত প্রকৃত অপরাধীরাও নানামুখী পরিচয়ের আড়ালে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তারই জলন্ত উদাহরণ এই হামলার ঘটনা। এটাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। বরং যারা এভাবে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার পাঁয়তারা করছে তাদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে আরও সাবধান থেকে যথাযথ কারণ অনুসন্ধানপূর্বক ঘটনার মূলোৎপাটনে দৃশ্যমান ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্থানীয় পর্যায়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা, বিশেষ করে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী যেনো যে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি ও রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে উঠে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ ও ন্যায়-নিষ্ঠ আচরণ দেখতে চাই।

স্থানীয় পর্যায়ে কর্মরত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ যেমন আছে, একইভাবে সৎ, নির্ভীক ও ন্যায়-নিষ্ঠ থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্তও অনেক রয়েছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবি কর্তৃক নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে বিগত কয়েক বছর ধরে নারী ইউএনওরা অনেক ঝুঁকি মোকাবিলা করে স্থানীয় প্রশাসনে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক দৃষ্টান্ত রেখে চলেছেন। তাদেরই একজনের ওপর এই জঘন্য হামলা রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের  প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকটের বাস্তব ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভবপর না হলে দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সৎ, নির্ভীক ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের ওপর।

এছাড়া প্রতিটি অপ্রতিকর ঘটনাতেই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার বিব্রতকর যে বিবরণ নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে, তাতে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য কঠোর আত্মবিশ্লেষণ করাটা এখন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password