কোলের শিশুকে পানিতে ফেলে দিলেন মা

কোলের শিশুকে পানিতে ফেলে দিলেন মা
MostPlay

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিমবাজার এলাকার একটি ব্রিজ থেকে অথৈই পানিতে কোলের শিশুকে ফেলে দিলেন তার মা। পানিতে পড়ে শিশুটি ভাসতে থাকে অনেকক্ষণ। পরে পথচারী এবং এলাকাবাসী শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। শিশুটি এখন স্থানীয় রফিকুল ইমলাম এবং এলিনা দম্পতির কাছে যত্নে আছে। শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে।

এলিনা শিশুটিকে তার বুকের দুধও পান করিয়েছেন। শিশুটি এখন সুস্থ আছে। তবে শিশুটির মা জমিলা বেগম শিশুটিকে ফেলে দিয়েই বাড়ির দিকে চলে যান।

প্রতিবেশীরা জানান, শুক্রবার জমিলা দুই কেজি চাল সবার আড়ালে বিক্রি করে শিশুর জন্য খাবার ও তেল সাবান কিনে আনলে তার বাবা রাগান্বিত হন এবং জমিলাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। মনের দুঃখে অবুঝ শিশুকে নিয়ে হতাশ জমিলা বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাশিম বাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজের ২০ ফিট নিচে অথৈই পানিতে ফেলে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন সন্তোষ জানান, সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে তিনি ওই পথে বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় ব্রিজটির উপরে উঠলে একটি মহিলাকে কিছু পানিতে ফেলতে দেখেন। কিছু পড়ার শব্দ শুনে নিচে তাকিয়ে দেখেন একটি শিশু পানিতে ভাসছে এবং হাত-পা নাড়াচ্ছে। দ্বিগবিদিক না তাকিয়ে তিনি চিৎকার করতে থাকে। তার চিৎকারে স্থানীয় ফরিদুল ইসলাম এবং একজন পথচারী এগিয়ে আসেন।

ব্রিজ থেকে তারা নেমে পানি সাঁতরে শিশুটিকে প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে উদ্ধার করেন। এসময় ধরে শিশুটি পানিতে ভাসতে থাকে। উদ্ধারের পর আগুন জ্বালিয়ে তাপ দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করা হয়। এ সময় ব্রিজের পাশের বাড়ির রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতি শিশুটিকে হেফাজতে নেন এবং শুশ্রুর্ষা চালান।এলিনা বলেন, শিশুটিকে তার বুকের দুধ খাওয়ানো হয়েছে। শিশুটিকে তিনি লালন পালন করতে চান।

জমিলা বেগমের ভাষ্য, এক বছর আগে দুই মাসের সন্তান জাহিদকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি রংপুর থেকে বিতাড়িত হন তিনি। পরে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পূর্বকেদার গ্রামের হতদরিদ্র বাবা জয়নাল মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। দিনমুজুর বাপের বাড়িতে অভাব অনটন থাকায় তার সন্তানের ভরনপোষণ নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্ব হতো। সন্তানের খাবার এবং খরচ চালাতে মাঝে মধ্যে তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো। এসব থেকেই সন্তানকে পানিতে ফেলে দেয়ার চিন্তা আসে তার।

জমিলার বাবা জয়নাল মিয়া বলেন, সকালে আমি ও আমার ছেলে মাটি কাটতে এসেছি। মাটিকাটার কাছাকাছি জায়গায় মানুষের কোলাহল শুনি। পরে জানলাম আমার মেয়ে জমিলা তার ছেলে জাহিদকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। কী কারণে এরকম কাজ করলো তা আমি জানি না।

জয়নাল মিয়া বলেন, দুই বছর আগে রংপুরের মর্ডানমোরের ভর্ত কবিরাজের ছেলে হাফিজুরের সঙ্গে জমিলার বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের এক বছর পরেই দুই মাসের কোলের শিশুকে নিয়ে সংসার ভাঙে জমিলার। এসময় জাহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে জমিলা। এদিকে তিন সন্তান নিয়ে বড় মেয়ে জরিনা তার সংসারে ফিরে এসে মাথার বোঝা হয়ে আছে আগেই। সব মিলিয়ে নয় সদস্যর পরিবারে ভরণপোষন অসাধ্য হয়ে উঠে জয়নালের। দিনমুজুরি করে এই বিশাল সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

জমিলার মা জবেদা বেগম জানান, জমিলার সন্তানকে নিয়ে প্রায়ই পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকতো। তার খরচ চালাতে চাইতো না জমিলার বাবা।জমিলার বৃদ্ধা নানী সুফিয়া বেওয়া জানান, তার ভিক্ষাবৃত্তির চাল দিয়ে মাঝেমধ্যে জমিলার সন্তানের খরচ চলতো। তবে জমিলা তার সন্তানের জন্য অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন। এসব নির্যাতন থেকে বাঁচতে আজকে সন্তানকে পানিতে ফেলে দিয়েছেন।

বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জানান, শিশুটি আপাতত রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতির কাছে রয়েছে। তাকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হবে।এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, বিষয়টি আমি কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি। চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়েছিলাম। খোঁজখবর নিয়ে ওই পরিবারকে সহযোগিতা দেয়া হবে।

 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password