সিরাজগঞ্জে তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

সিরাজগঞ্জে তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
MostPlay

করোনায় সুতা  রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের অধিকাংশ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁতীদের ৬শ টাকার কাপড় উৎপাদনে এখন খরচ হচ্ছে ১২শ টাকা। তবে করোনা বিপর্যয় ও লকডাউনে হাট ঘাট বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বিপণিবিতানগুলো সরকারি নির্দেশে খুলে দেয়া হলেও বেচাবিক্রি জমে না ওঠায় উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি ও বিক্রি করতে পারছেন না তাঁতীরা। কারখানা মালিকেরা জানান, স্থানীয় সুতার মিলের মালিকরা দফায় দফায় ইচ্ছামাফিক সুতার মূল্য বৃদ্ধি করছে। কারণ হিসেবে তুলার মূল্য বৃদ্ধির কথা বলছে মিল মালিকরা। কিন্তু মজার বিষয় হলো তুলার মূল্য বেড়েছে পাউন্ডপ্রতি ২৫ থেকে৩৫ টাকা। কিন্তু মিলমালিকেরা সেই সুযোগ নিয়ে সুতার মূল্য বৃদ্ধি করেছে প্রতি পাউন্ডে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। রং ও কেমিক্যালের মূল্যও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁতীদের কল্যাণে কোনো পদক্ষেপ না নিলে তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের। 

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কাপড় উৎপাদনের উপকরণের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির ফলে চৌহালী এনায়েতপুর  বেলকুচি শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও সদর এলাকায় ইতোমধ্যে প্রায় লক্ষাধিক তাঁত কল বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা করোনাকালীন অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন।  সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা ও খাদ্য সহযোগিতা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন খোকশাবাড়ি গ্রামের তাঁত মালিক নুর আলম ও ভাঙ্গাবাড়ির মহল্লার তাঁত মালিক খ ম আলআমিন।  তারা জানান, সূতা রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মূল্য দ্বিগুণ বেশি বৃদ্ধির ফলে কাপড় উৎপাদনে লোকশান গুনতে হচ্ছে তাঁত মালিকদের। তারা বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন তাদের তাঁত কারখানাগুলো। 

এ বিষয়ে জাতীয় তাঁতী সমিতির সভাপতি মনোয়ার হোসেনসহ এলাকার তাঁত মালিক, তাঁত শ্রমিকরা জানান, তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলা এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ  তাঁত রয়েছে। করোনা ও দফায় দফায় কাপড় উৎপাদন সমাগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক তাঁতীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা গত চার মাসে লক্ষাধিকেরও বেশি তাঁত বন্ধ করে দিয়েছে। তাঁতশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাকল্পে ও বেকার তাঁত শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সঠিক নজরদারির অভাব। 

এছাড়া তাঁত শিল্পকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডকে চলমান আমদানি সুবিধা প্রদানের জন্য তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমদানি সুপারিশ প্রদান করতে হবে। স্থানীয় সুতার মিলারদের নির্ধারণ করা মূল্যের চেয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পলিষ্টার সুতার আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।  এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি হাজী বদিউজ্জামান সাংবাদিককে জানান, করোনা মহামারীর মোকাবেলায় অন্যান্য খাতে সরকারিভাবে ভর্তুকি দিলেও তাঁত শিল্পের জন্য কোনো প্রণোদনা বা ভর্তুকির দেয়া হয়নি। এ কারণে জেলার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি তাঁত শিল্প দিনকে দিন ধ্বংসের মুখে পড়ছে। তিনি এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে রং ও সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠন করার দাবি করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password