কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের স্মৃতি ধরে রাখতে ছেলের নামে একটি মসজিদ নির্মাণ এবং হত্যাকাণ্ডে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছেন মা মনোয়ারা বেগম। রোববার (২৮ জুলাই) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এ দাবি জানান।
গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদের মৃত্যুর পর নানা ভাবে তার স্বজনদের সান্তনা দিয়েছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। তবে, আবু সাঈদের মা জানেন কোনো কিছুতেই তার সন্তান ফিরে আসবেন না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাই এক সন্তানহারা মায়ের অনুরোধ ছিল আবু সাঈদের স্মৃতি যেন ধরে রাখা হয়। মা মনোয়ারা বেগম বলেন, পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করে মেরেছে, আমি তার বিচার চাই। বিচার যেন এমন হয় যা দেখে আর কোনো মায়ের বুক খালি করার সাহস কেউ না পায়।
প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। আমার দাবি আমার ছেলের নামে সরকার যেন একটা মসজিদ তৈরি করে দেন। সেখানে মানুষজন নামাজ পড়বে, আবু সাঈদের জন্য দোয়া করবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।
গণমাধ্যম ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নিরস্ত্র এই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ভিডিও নাড়া দিয়েছে পুরো জাতিকে। এভাবে একটি সম্ভাবনাময়ী তরুণের মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
রোববার দুপুরে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে আবু সাঈদেরসহ ৩৪ পরিবারের হাতে সঞ্চয়পত্র ও নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দেন সরকারপ্রধান। এর আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তার সঙ্গে দেখা করতে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন আবু সাঈদের পরিবার। গণভবনে একেকটি পরিবারের অশ্রুসজল আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের বুকে টেনে নেন প্রধানমন্ত্রী। শুনেন তাদের কথা। তাদের নিজের উদাহরণ টেনে সান্ত্বনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এ সময় আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা জানান, কোনো কিছুতেই এই মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হয় না। তবে সারাদেশের মানুষ ও প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সম্মান দেখিয়েছেন তাতে কৃতজ্ঞ তারা। সেই সঙ্গে আর কোনো সম্ভাবনাময় প্রাণ যেন এভাবে ঝড়ে না যায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই দাবি আবু সাঈদের বাবা ও পরিবারের সদস্যদের।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মা-বাবার ৯ সন্তানের মধ্যে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তান ছিল আবু সাঈদ।
গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রংপুরসহ পুরো দেশজুড়ে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন