কাল থেকে এক দফা ঘোষণা কোটা আন্দোলনকারীদের

কাল থেকে এক দফা ঘোষণা কোটা আন্দোলনকারীদের

আন্দোলনের ভিন্ন মাত্রা, 'বাংলা ব্লকেড'। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে এবার এমন কর্মসূচি পালন হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে কার্যত যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয় শিক্ষার্থীরা। দুপুরে শুরু হওয়া এই অবরোধে অংশ নেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।

কাল থেকে এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রাতে শাহবাগ থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা। কোটা আন্দোলনের প্রভাবে রাজধানীজুড়ে ছিলো তিব্র যানজট। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা শেষে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। দূরদুরান্তে যাদের গন্তব্য দীর্ঘ অপেক্ষার পরও গাড়ি পাননি তারা। মেট্রোতেও বাড়তি যাত্রী চাপ থাকায় ঠাই হয়নি সবার।

চলমান চার দফা দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে এক দফা দাবিতে নামিয়ে এনে ফের সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। রোববার রাত ৮টায় শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচির শেষে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে মূল ব্লকেড আন্দোলন শুরু হবে। তাছাড়া একই সময়ে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এ ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি হলো- সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। আন্দোলনে বিপুল সাড়া পাওয়ার কথা তুলে ধরেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, কোটা বাতিলের আন্দোলনের যৌক্তিকতা আমরা ২০১৮ সালেই প্রমাণ করেছি। আমাদের আদালত দেখিয়ে লাভ নেই, আমরা আপনাদের সংবিধান দেখাচ্ছি। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এবারও শিক্ষার্থীদের জনমতের পক্ষে সংসদে দাঁড়িয়ে কোটার বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহা দেবেন। শিক্ষার্থীদের ‘পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে’ দাবি করে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আর কোনো অপশন নেই।

আমরা হয় দাবি আদায় করে ফিরব, নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। মেধার মূল্যায়ন যেখানে নেই, সেই দেশে কেন মেধাবীরা থাকবে? নাহিদ ইসলামের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ বক্তব্য দেন। সন্ধ্যার দিকে এই দুই নেতা, নাহিদ ইসলাম ও আরেক নেতা আসিফ মাহমুদকে পুলিশ কর্মকর্তারা ডেকে নিয়ে কথা বলেন।

ফিরে এসে তারা বলেন, কোনো আপসে যাবেন না৷ ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছিলেন। আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে পুরো কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে।

ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন।

৫ জুন এই রিটের রায়ে পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password