৭ উপজেলায় এক ছটাক ধান সংগ্রহ হয়নি

৭ উপজেলায় এক ছটাক ধান সংগ্রহ হয়নি

চলতি মৌসুমে রংপুরে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। রংপুরের আট উপজেলায় রোববার ওই খাদ্য শস্য সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সিকি ভাগও পূরণ হয়নি খাদ্য শস্য সংগ্রহ অভিযান। সাত উপজেলায় এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। ফলে রংপুরের খাদ্য গুদামগুলো খালি থাকার আশংকা করা হচ্ছে। 

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারিভাবে খাদ্য শস্য অভিযান ১৫ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা খাদ্য কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র জানায়, রংপুরের আট উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন, সেখানে কেনা হয়েছে মাত্র দুই মেট্রিক টন। অন্যদিকে, চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন এর বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন।

রংপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার আমন মৌসুমে রংপুরে আট উপজেলার জন্য খাদ্য শস্য সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় খাদ্য বিভাগ। কিন্তু খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত অটোরাইস মিলসহ হাসকিং মিলার মালিক তিনশ'র বেশি থাকলে চুক্তি কে করেছেন মাত্র ৬৩ জন চালকল মালিক। এরপরেও চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেননি।

গত বছর বোরো মৌসুমেও রংপুর জেলায় ধান-চাল ক্রয় অভিযান ব্যর্থ হয়। সেবারও খাদ্য বিভাগ ঘোষণা দিয়েছিল যে সব চুক্তিবদ্ধ মিলার চুক্তি করেও চাল দেয়নি তাদের আর্নেস্ট মানি বাজেয়াপ্তসহ চুক্তি বাতিল করা হবে। পাশাপাশি নতুন করে আর চুক্তি করা হবে না বলেও জানানো হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত খাদ্য বিভাগ রহস্যজনক কারণে নিজেই সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

একইভাবে খাদ্য বিভাগের নির্ধারণ করা দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা এবার ধান বিক্রয় করতে রাজি হয়নি। তার ওপর খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য এবং হয়রানির কারণে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে অনিহা প্রকাশ করেন। ফলে খাদ্য শস্য সংগ্রহ আভিযানের এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় এবার উপজেলা ওয়ারি ধান ও চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল রংপুর সদর উপজেলায় ১ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। বিপরীতে এক কেজি ধান কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। অন্যদিকে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন। বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ২৬৭ মেট্রিকটন চাল।

অপরদিকে বদরগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬ মেট্রিক টন। কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৪ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ২০ মেট্রিক টন।

মিঠাপুকুর উপজেলায় ধান কেনার কথা ছিল চার হাজার ১৯৮ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন, বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ৪১৯ মেট্রিক টন। পীরগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ১৯৪ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র দুই মেট্রিক টন। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৮০২ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ৬৭৯ মেট্রিক টন।

তারাগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০২ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। অন্যদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫০ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৭৬ মেট্রিক টন, তবে এক ছটাক চালও কেনা যায়নি।

কাউনিয়া উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৪ মেট্রিক টন। তবে ১ কেজি ধানও কেনা যায়নি। আর চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৯৪ মেট্রিক টন, সেখানে চাল কেনা হয়েছে মাত্র চার হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। পীরগাছা উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬৭ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। অন্যদিকে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন, তবে এক ছটাক চালও কেনা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খাদ্য কর্মকর্তা জানান তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা খাদ্য বিভাগের গুদাম ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তারা এক কেজিও ধান ও চাল কিনতে পারেননি। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সার্বিক বিষয়ে জানতে কথা হয় রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল করা যায়নি বলে স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, রোববার ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযানের সীমা ছিল। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় এই সংগ্রহ অভিযান সরকারীভাবে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

বাস্তব পরিস্থিতিতে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নাই। কারণ বিক্রির জন্য কৃষকের ঘরে ধানের মজুত নাই। অনেক মিলার ধানের অভাবে তাদের মিলে চাল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি হলেও সংগ্রহ অভিযান বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। ওই খাদ্য কর্মকর্তাও তাই মনে করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, মাত্র ৬৩ জন মিলারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। তবে তারাও চাল পুরোপুরি দিতে পারেনি। বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরাও ধান বিক্রি করেনি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password