লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে চেপে পেটায় মাদরাসাশিক্ষক

লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে চেপে পেটায় মাদরাসাশিক্ষক

এবার নিজের ছেলের মাথায় আঘাত করার অজুহাতে হাফেজিয়া মাদরাসার ১১ বছরের কিশোরকে পায়ের নিচে ফেলে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ ওঠেছে মাদরাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর বাজারস্থ হাফেজিয়া মাদরাসায়। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রের নাম জাহিদ হাসান। তিনি স্থানীয় মির্জাপুর বাজার সংলগ্ন মদনপুর গ্রামের ওবায়দুল ইসলামের ছেলে।

এদিকে, ভুক্তভোগী ওই ক্ষুদে শিক্ষার্থী পরিবারের পক্ষ থেকে শনিবার (২০ মার্চ) থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক আল আমিনকে (৩৯) আটক করা হয়। পরে মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।

অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, উপজেলার মির্জাপুর হাফেজিয়া মাদরাসায় শুক্রবার (১৯ মার্চ) সকালে পাঠদান শেষ হওয়ার পর মাদরাসা প্রাঙ্গনে সব ছাত্ররা খেলাধুলা করছিল। এ সময় প্রধান শিক্ষক (মুহতামিম) আল আমিনের ছেলে হাবিবুল্লাহর মাথায় সামান্য আঘাত লাগে। মসজিদের ছাদ থেকে ইট পড়ে এই আঘাতটি লেগে থাকতে পারে! কিন্তু এজন্য ছাত্র জাহিদ হাসানকে দায়ী করেন শিক্ষক আল আমিন। সেই সঙ্গে বিচারের কথা বলে অনেকটা জোর করে তাকে মাদরাসার একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর শিক্ষক আল আমিন নিজেই লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। এ সময় মাদরাসার ছাত্র জাহিদ হাসান ওই শিক্ষকের পা ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু তার মন গলেনি। এমনকি লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে চেপে ধরে এলোপাথাড়িভাবে বেত্রাঘাত করতে থাকেন। এতে ওই ক্ষুদে শিক্ষার্থীর বাম হাত, পেটের ডান পাশে, কোমড় ও দুই পায়ে রক্তাক্ত জখম হয়। একপর্যায়ে আহত জাহিদ হাসান বাড়ি যেতে চাইলে তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়। তবে জুম্মার নামাজে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে পালিয়ে বাড়িতে যায়। সেইসঙ্গে ঘটনাটি পরিবারের সদস্যদের কাছে খুলে বললে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

নির্যাতনের শিকার মাদরাসা ছাত্র জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। এমনকি কারও মাথায় আঘাতও করিনি। এরপরও মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে ব্যাপক মারপিট করা হয়। এমনকি মাদরাসা একটি কক্ষে আটকে রেখে সকালের খাবারও খেতে দেওয়া হয়নি। হুজুরের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়।’ এলোপাথাড়িভাবে বেত্রাঘাত করে আহত করা হয় বলে অভিযোগ করে ওই ছাত্র। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক আল আমিন জানান, এই কৃতকর্মের জন্য তিনি খুবই অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থী। শাসন করার সময় রাগের বসে এটি হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর কোনোদিন এ ধরনের কাজ হবে বলে দাবি করেন তিনি। 

শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর উভয়পক্ষকে শনিবার দুপুরে থানায় ডাকা হয়। কিন্তু নিজেরাই বিষয়টি আলাপ-আলোচনা করে মীমাংসা করে নিয়েছেন বলে জানায়। সেইসঙ্গে থানায় দেওয়া অভিযোগটি ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়ে। তাই উক্ত ঘটনায় থানায় কোনো মামলা নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password