দেশে টিকা উৎপাদন করতে আর কিছু সময় লাগবেঃ প্রধানমন্ত্রী

দেশে টিকা উৎপাদন করতে আর কিছু সময় লাগবেঃ প্রধানমন্ত্রী
MostPlay

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে শুভেচ্ছা ভাষণের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন জনগণের সহযোগিতা এবং সরকারের সময়োচিত কার্যক্রমে গত বছর করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই মার্চে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। আর করোনাভাইরাস প্রতিরোধী সবচেয়ে কার্যকর এবং পরীক্ষিত অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা’র টিকা দিয়েই দেশে গণটিকাকরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ টিকা রপ্তানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া, দেশেই যাতে টিকা উৎপাদন করতে পারি সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। নিজেদের দেশে টিকা তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে বলেও  জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে শুভেচ্ছা ভাষণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  তার ভাষণে বলেন, আমাদের দেশে যেন করোনা বড় কোন আঘাত না আনতে পারে সে জন্য যতটুকু প্রয়োজন প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়াও আমরা বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে রাশিয়া এবং চিনের টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে টিকা ইতোমধ্যেই আমরা পেয়েছি। আমরা টিকা পাওয়ার জন্য আমেরিকার কাছেও অনুরোধ জানিয়েছি। বিশ্ব টিকাকরণ সংস্থা কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা পাবো। বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা এক কোটি টিকা ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। তাছাড়া, দেশেই যাতে টিকা উৎপাদন করতে পারি সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। নিজেদের টিকা তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা দেশের সকল নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসবো।

তিনি আরও বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শুধু মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে না, এই ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। সংক্রমণ এড়াতে লকডাউন বা সাধারণ ছুটি বলবৎ করতে হয়েছে।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা গত বছর একটানা দুই মাসেরও বেশি সাধারণ ছুটি বলবৎ করেছিলাম। দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর গত মাসের ৫ তারিখ থেকে পর্যায়ক্রমে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। এরফলে অগণিত মানুষের রুটি-রুজির উপর আঘাত এসেছে। কিন্তু এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় ছিল না। কারণ, আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, প্রতিটি দেশেরই স্বাস্থ্য অবকাঠামোর একটি নির্দিষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। হঠাৎ করে দ্রুতগতিতে রোগী বাড়তে থাকলে তখন সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আপনারা দেখেছেন, উন্নত দেশগুলো পর্যন্ত করোনা রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্য আমাদের কোনোভাবেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেওয়া যাবে না। তবে আমরা জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত সর্বমোট এক লাখ ঊনত্রিশ হাজার ছয়শত তের কোটি টাকার সহায়তা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২১টি খাতে সর্বমোট ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর অনুদান বাবদ ৮ হাজার ২৬০ কোটিরও বেশি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

অনুদান কিংবা ত্রান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর সাময়িক কর্মহীন ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট ৯১২ কোটি ৫০ লাখ দেওয়া হয়েছে। এ বছরও সমসংখ্যক মানুষকে একই হারে ৯১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬০৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।  দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, সাধারণ শ্রমিক, নিম্নআয়ের মানুষ, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সেবকগণ, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক- ইত্যাদি পেশার মানুষজন এ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এসেছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password