করোনা মহামারীর লকডাউনে বিপাকে দুগ্ধ খামারিরা

করোনা মহামারীর লকডাউনে বিপাকে দুগ্ধ খামারিরা

লকডাউনের কারণে কোম্পানীগঞ্জে খামারে উৎপাদিত দুধ বাজারজাত করতে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। এখানকার খামারগুলোতে উৎপাদিত দুধ বিক্রি হতো মূলত মিষ্টির দোকান, দধি তৈরি প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি এবং চায়ের দোকানগুলোতে। কিন্তু লকডাউনে একদিকে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ, অন্যদিকে বিয়ে, বৌভাতসহ সব সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় মিষ্টি ও দধির চাহিদা এখন প্রায় শূন্যের কোটায়। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান দুধ কিনছে না। উপরন্তু এ অঞ্চলে কোনো দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রও নেই। ফলে দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।

 উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় নিবন্ধিত বড় খামারি রয়েছেন ৭৪ জন, মাঝারি খামারি ৯৯ ও ছোট খামারি রয়েছেন ৩৮১ জন। উপজেলায় বর্তমানে দুধ উৎপাদন হয় দৈনিক প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার লিটার। খামারিরা উৎপাদিত দুধ সময়মতো বাজারজাত বা প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে না পারায় তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে খামার বা দুগ্ধ উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন স্থানীয় খামারিরা। উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে নদীভাঙনে নিঃস্ব ভূমিহীন পারিবারগুলো নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পরিবারভিত্তিক অসংখ্য দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছে। দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী পালনকারী এসব খামারি পরিবার এখন চরম বিপাকে পড়েছে।

উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ক্ষুদ্র খামারি রহিম মোল্লা বলেন, তিনি দুটি বিদেশি গাভী পালন করছেন। প্রতিদিন তার খামারে দুধ উৎপাদন হয় ৯ থেকে ১১ লিটার। উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, তার খামারে ১৪টি বিদেশি জাতের গাভি থেকে ইতোঃপূর্বে প্রতিদিন শতাধিক লিটার দুধ উৎপাদন হতো। এখন বাছুর ছেড়ে রেখে দুধ খাইয়ে, গরুকে কম খাবার দিয়েও দিনে ৫০-৬০ লিটার দুধ পান, তাও বাজারজাতকরণে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। উপজেলার চরহাজারীর খামারি নজরুল ইসলাম বলেন, তার খামারের ১৭টি গাভী থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এসব খামারি জানান, ইতোঃপূর্বে তাদের খামারে উৎপাদিত দুধ ৬০-৭০ টাকা মূল্যে বিভিন্ন মিষ্টির দোকান, দধি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি কিংবা চায়ের দোকানে বিক্রি করতেন। লকডাউনে অনুষ্ঠানাদিও বন্ধ। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ থাকায় তারা এখন আর দুধ কিনছেন না। গ্রামে খুচরা পর্যায়ে এত দুধের চাহিদাও নেই। তাই দুধ নিয়ে তারা আছেন বিড়ম্বনায়। স্থানীয় কয়েকজন ক্ষুদ্র খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংক ঋণ, বেসরকারিভাবে ঋণ ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে অর্থায়নের মাধ্যমে পরিবারভিত্তিক খামার গড়ে তুলেছেন তারা। এতে সফলতাও আসে এবং অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েও ওঠেন। 

কিন্তু এখন লকডাউনের কারণে উৎপাদিত দুধ বাজারজাত করতে না পেরে বেকায়দায় পড়েছেন অনেক খামারি। এমন অবস্থায় গাভী পালনের খরচ উঠাতেই তাদের কষ্ট হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, খামারিদের উৎপাদিত দুধের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে মিল্ক ভিটা লিমিটেড দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে একটি সেলিং পয়েন্ট স্থাপন করার উদ্যোগ নিলেও অজানা কারণে এখনো তা চালু হয়নি। এ সেলিং পয়েন্টটি চালু হলে খামারিদের দুধ বিপণন সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password