বগুড়ার গাবতলীতে বস্তায় ভরে ইট বেঁধে পুকুরে ডুবিয়ে দেওয়া হয় শিশু হানজেলাকে

বগুড়ার গাবতলীতে বস্তায় ভরে ইট বেঁধে পুকুরে ডুবিয়ে দেওয়া হয় শিশু হানজেলাকে

বগুড়ার গাবতলীতে ছয় বছরের শিশু হানজেলাকে অপহরণ ও হত্যার পর পুকুরে লাশ ডুবিয়ে দেওয়ার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। মাদক কেনার টাকা সংগ্রহে ও ঋণ পরিশোধে মজনু মিয়া (৩৪) নামে এক ওষুধ বিক্রেতা শিশুটিকে অপহরণের পর হত্যা ও পুকুরে লাশ ডুবিয়ে দিয়েছিল। 

ঘটনায় প্রায় দুমাস পর শুক্রবার সকালে ডিবি পুলিশ তাকে উপজেলার নিশুপাড়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। মজনু শনিবার রাত ৮টার দিকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বগুড়া ডিবি পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আবদুর রাজ্জাক এ তথ্য দিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর বিকাল ৩টার দিকে গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের নিশুপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী পিন্টু মিয়া প্রামাণিকের ছেলে হানজেলা বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ওই দিন পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় ডিজি করা হয়। পরে তার মা তাসলিমা বেগমকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। 

অপহরণকারী মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। স্বজনরা এ বিষয়ে গাবতলী থানায় অবহিত করলেও পুলিশের তেমন সাড়া পাননি। অপহরণকারী ২১ জানুয়ারি মোবাইল ফোনে হানজেলার মরদেহের সন্ধান দেয়। তার দেওয়া তথ্যানুসারে পুলিশ রাতে গ্রামের একটি পুকুর থেকে পলিথিনে মুড়িয়ে ইট বেঁধে ডুবিয়ে রাখা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। 

এ বিষয়ে শিশুর বাবা গাবতলী থানায় হত্যা মামলা করেন। সে সময় পুলিশের অবহেলায় শিশু হানজেলা খুন হয় বলে প্রচার হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গাবতলী থানার ওসি নুরুজ্জামান রাজুকে শুধু অন্যত্র বদলি করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তে বগুড়া ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ডিবি পুলিশের ওসি আবদুর রাজ্জাক ও অন্যরা জানান, তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মজনু মিয়ার নাম আসে। তিনি নিশুপাড়া গ্রামের আবদুল জোব্বারের ছেলে। শুক্রবার সকালে তাকে গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি শিশু হানজেলাকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। 

তিনি জানান, মাদক সেবনের টাকা ও ঋণের টাকা সংগ্রহে প্রতিবেশী ভাগ্নে হানজেলাকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। শিশু হানজেলা মাঝে মাঝে প্রতিবেশী মামা মজনুর ওষুধের দোকানে যেত। ১৩ ডিসেম্বর মজনু তার দোকানে বসে ইয়াবা সেবন করছিল। এ সময় হানজেলা এলে তিনি তাকে ভেতরে নিয়ে সাটার নামিয়ে দেন। এর পর মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করলে শিশুটি চিৎকার দেয়। তখন মজনু গলাটিপে তাকে হত্যা করেন। 

এর পর স্কচটেপ দিয়ে পুরো শরীর পেঁচিয়ে দোকানের কাঠের র্যাকে রাখেন এবং পরে বাড়িতে যান। রাত সাড়ে ৩টার দিকে দোকানে এসে মরদেহ বস্তায় ভরে তিনটি ইট দিয়ে বেঁধে পাশে পুকুরে ডুবিয়ে রাখেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, মজনু মিয়া আনন্দ কুমার দাস নামে এক পঙ্গু ভিক্ষুককে ভাতার কার্ড দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আইডি কার্ড ও আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে সিম কেনেন। হত্যা ও লাশ গুমের পরও মজনু ওই সিম ব্যবহার ও কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে হানজেলার মায়ের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন। কিন্তু টাকা না পেয়ে তিনি গত ২১ জানুয়ারি ফোনে মাকে জানিয়ে দেন ছেলের মরদেহ পুকুরে ডোবানো আছে। পুলিশ তার কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও দুটি সিমকার্ড উদ্ধার করেছে।

শুক্রবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর মজনু মিয়া শিশু হানজেলাকে হত্যার কারণ ও অন্যান্য ঘটনা প্রকাশ করেন। শনিবার বিকালে তাকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। রাত ৮টার দিকে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ডিবি ইন্সপেক্টর আবদুর রাজ্জাক জানান, মজনু মিয়া হত্যার পরিকল্পনাসহ সব কিছু আদালতে বলেছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password