অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করা পরিবারটিকে সহায়তা

অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করা পরিবারটিকে সহায়তা

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী মর্জিনা বেগমের পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা, শাড়ি-জমাসহ বস্ত্র সামগ্রী ও শুকনা খাবার সহায়তা দিয়েছে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন।

সোমবার (০১ মার্চ) বিকেলে মর্জিনা বেগম (৩৫) ও তার স্বামী খলিল মন্ডল (৪৮)-এর হাতে এই সহায়তা তুলে দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি। মর্জিনা বেগম ও খলিল মন্ডল দম্পতি অভাবের তাড়নায় এক সপ্তাহ আগে ৩ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী আইয়ুব আলী।

তিনি আরও জানান, মর্জিনা বেগম ও খলিল মন্ডল দম্পতির ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই। এজন্য ৯ বছর আগে তাদের বুড়াবুড়ি  ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ এলাকার গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় দেয়া হয়। দিনমজুরী করে সংসার চালাতো। এখন শারীরিক অক্ষমতার কারণে কাজ করতে পারেনা খলিল মন্ডল। ফলে  আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে আসে। আর স্ত্রী মর্জিনা বেগম শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন কাজ করতে পারেন না। এমতাবস্থায় ৬ সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। এজন্য এক সপ্তাহ আগে অভাবের তাড়নায় ৩ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তারা।

খলিল মন্ডল ও মর্জিনা বেগমের প্রথম সন্তান কলিমা খাতুন (১২)  মাসিক ২ হাজার টাকা বেতনে রংপুরের একটি বাসায় ঝিঁয়ের কাজ করছিল। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় কাজ করতে না পারায় তাকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান কলিমউদ্দিন জন্মের ৩ মাসের মাথায় পুষ্টিহীনতার কারণে মারা যায়। তৃতীয় সন্তান মিজানুর (৯), চতুর্থ  সন্তান ইছানুর (৪) ও পঞ্চম সন্তান খুশি খাতুন (২) বাবা-মার সাথেই থাকে। আর ষষ্ঠ সন্তান ৩ মাস বয়সী কন্যাটিকে বিক্রি করেছেন।

এর আগে প্রায় ১৬ মাস পুর্বে ২ দিন বয়সী একটি শিশু কন্যাকে বিক্রি করলেও কোন টাকা পাননি। এলাকার অধিবাসী দেনছার আলী ও হালিমা বেগম জানান, খলিল মন্ডল কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ও শারীরিকভাবে এবং মর্জিনা বেগম শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন কাজ-কর্ম করতে পারেন না।

তারা কোন সহায়তাও পায়নি। তবে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া দাবি করেছেন পরিবারটিকে বিভিন্নভাবে সরকারি সহায়তা দেয়া হয়েছে।মর্জিনা বেগম বলেন, অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, পরিবারটিকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতাভূক্ত করা হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নিবার্হী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার জন্য সবধরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password