বন্যায় এখন পর্যন্ত ১১ জেলার ৪৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়। এছাড়া আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। বন্যার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে এদিন দুপুরে ব্রিফিং করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়।
সেখানে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী এক সাথে কাজ করছে। নিহতদের মধ্যে– কুমিল্লায় ৪ জন, কক্সবাজারে ৩, ফেনীতে ১, চট্টগ্রামে ২, নোয়াখালীতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়াইয় ১ ও লক্ষ্মীপুরের একজন রয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, কুমিল্লা ও ফেনীতে পরিস্থিতি তদারকিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা অবস্থান করছেন। দুর্গত মানুষদের জন্য সাহায্য হিসেবে সরকারিভাবে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ২০ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চাল সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়।
টানা ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। তবে নতুন করে আরও তিন জেলার বন্যাকবলিত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
সেগুলো হলো- রাঙামাটি, কক্সবাজার ও সিলেট। জানা যায়, বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণসহ উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সেনা সদস্যরা। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর মানুষ। জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা কার্যত পানির নিচে। কোথাও বুকপানি, কোথাও গলাপানি আর কোথাও কোথাও একতলা পর্যন্ত ডুবে গিয়েছে। অন্যান্য উপজেলার চিত্রও প্রায় একই।
এ ছাড়া, নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের একাধিক এলাকা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শ মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া, মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন