টাকায় বিক্রি হয় বিদেশ যাত্রীদের সনদ

টাকায় বিক্রি হয় বিদেশ যাত্রীদের সনদ
MostPlay

যারা বিদেশ যাবেন তাদের জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু সরকারের বাধ্যতামূলক এ প্রশিক্ষণ না নিয়েও পাওয়া যায় সনদপত্র। এটি মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চিত্র। এখানে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিলেই পাওয়া যায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের সনদপত্র।

মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সিলেট বিভাগের বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, পুরো হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কয়েকটি উপজেলার বিদেশ যাত্রীরা প্রশিক্ষণ নেন। করোনায় দীর্ঘদিন ভিসা প্রসেস বন্ধ থাকায় সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওয়ার্কপারমিটে লোক নেয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ওই সেন্টারে প্রশিক্ষণার্থীদের ভিড় বাড়ছে।

জানা যায়, বিদেশ গমনে ইচ্ছুক শ্রমিকদের কাঙ্খিত দেশের ভাষা, আইনকানুন, কাজের ধরন থেকে শুরু করে প্রাথমিক কিছু ধারণা দেয়া হয় প্রশিক্ষণে। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, দায়িত্বরতদের যোগসাজশে প্রতিনিয়ত দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে (পুরুষ যাত্রীদের) প্রশিক্ষণ ছাড়াই সনদ দেয়া হচ্ছে। নারীদের কাছ থেকে ৩০ দিনের জন্য নেয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।

মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কথা হয় হবিগঞ্জের সিকন্দরপুর গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়া, বাহুবল উপজেলার পশ্চিম ভাদেশ্বর গ্রামের আনু মিয়া, উত্তর দৌলতপুর গ্রামের রুবেল মিয়া এবং চুনারুঘাটের গফুর মিয়ার ছেলে আব্দুল করিমের সঙ্গে। তারা জনপ্রতি দুই হাজার টাকা দিয়ে প্রশিক্ষণ সনদ সংগ্রহ করেছেন।

বিদেশ যাত্রী কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী ইসলাম উদ্দিন বলেন, দুই হাজার টাকা দিলে পুরুষদের প্রশিক্ষণ দিতে হয় না। ঘরে বসেই সনদ পাওয়া যায়। জুড়ী উপজেলার ময়না মিয়া, শ্রীমঙ্গলের রিয়াদ হোসেনসহ অন্যান্যদের সঙ্গে কথা হলে তারাও একই কথা জানান।

এদিকে একাধিক প্রশিক্ষণার্থীর অভিযোগ, ২-৪ জন প্রশিক্ষণ নিলেও গল্প গুজব ব্যতিত এখানে কিছুই শিখানো হয় না। সবাই আড্ডা দেয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশগামী শ্রমিকদের তিন দিনের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণ না দিয়ে কর্মীদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তির পর উপস্থিত দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে সনদ দেয়া হচ্ছে। মৌলভীবাজার টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা তাদের মনোনীত দালালদের মাধ্যমে এসব সনদপত্র সংগ্রহ করে।

মৌলভীবাজার টিটিসিকে কেন্দ্র করে একটি দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। টিটিসির সামনের বেশ কয়েকটি দোকান সনদ বিক্রি বাণিজ্যে জড়িত।

সম্প্রতিহ পরিচয় গোপন রেখে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে কথা হয় অনেক বিদেশ যাত্রীদের সঙ্গে। সেখানে অনেকেই প্রশিক্ষণ না নিয়ে টাকার বিনিময়ে সনদ এনে ফিঙ্গার দিতে দেখা যায়।

পরিচয় গোপন রেখে মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্মচারী মিজানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সনদ নিতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। পুরুষের তিন দিনের ট্রেনিংয়ের জন্য দুই হাজার এবং নারীদের এক মাসের ট্রেনিংয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা দিলেই সনদ পাওয়া যাবে। শুধু প্রয়োজনীয় কাগজ দিয়ে সনদ নিয়ে যাবেন। একদিনও আসতে হবে না।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ নাহিদ নিয়াজ বলেন, ‘আমি ১২ দিনের প্রশিক্ষণে মৌলভীবাজারের বাহিরে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। এ রেওয়াজ তো ১২ দিন ধরে চলছে না, কয়েক বছর ধরে চলছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাহলে আমি অবগত ছিলাম না।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password