বগুড়ার আলু রফতানি হচ্ছে বিদেশে

বগুড়ার আলু রফতানি হচ্ছে বিদেশে
MostPlay

বগুড়ার উন্নত মানের আলু রফতানি হচ্ছে বিদেশে, তাও এক যুগ ধরে। এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছে বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার আলু।ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রবাসীদের কাছে আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে তাদের কাছে আলুর চাহিদা থাকলেও বাইরের দেশগুলোর স্থানীয় বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশের আলু।

তাই আলুর মান উন্নত করতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনার প্রয়োজন রয়েছে।রফতানিকারক ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়ার আলু প্রায় এক যুগ থেকেই রফতানি হচ্ছে। জেলা থেকে এবার ২০ হাজার মেট্রিক টন সবজি বিদেশে রফতানি করা হবে। এর মধ্যে আলু রফতানি করা হবে ১১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের দিকে শুরু হয় বিদেশে আলু পাঠানো। প্রথমে ব্যক্তি পর্যায়ে আলু সরবরাহ করা হতো বিদেশে। তাই এ তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে। তবে আগের বছরগুলোর রফতানির কোনো তথ্য না থাকলেও এবার সবজি রফতানির নথি তৈরি করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়। তারা বলছেন, এবার বগুড়া থেকে আলু যাবে অন্তত ১১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

এবছর বগুড়ার এসব আলু পাঠানো হচ্ছে এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ঋণসুবিধা পেলে রফতানির পরিমাণ আরো বাড়াতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এদেশগুলোতে প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আলুর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।বগুড়া থেকে এ বছর আলু রফতানি করা হবে ১১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে চার লাখ ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ১৩ লাখ ৭১ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা গত বছরের প্রকৃত উৎপাদনের চেয়ে প্রায় সাড়ে  চার লাখ টন বেশি। গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৯ লাখ ১৭ হাজার টনঅধিদফতরের হিসাব মতে, দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৭৭ লাখ টন। অর্থাৎ, বছরে ২৬ থেকে ৩৭ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। বছরে রফতানি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টন। যার সিংগভাগ পূরণ করছে বগুড়া।

প্রতিবছর জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে আলু রফতানি হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের আলু খুব প্রসিদ্ধ। এখানে প্রায় ২০-২২ জাতের আলু উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে যেসব আলু বেশি হয়ে থাকে তা হলো স্থানীয় জাতের আলু পাখড়ী, হাগড়াই ও রোমানা ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল আলু অ্যালভেরা, গ্যানোলা, অ্যাস্ট্রারিক বা স্টিক, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড। ডায়মন্ড, অ্যাস্ট্রারিক ও ক্যারেট জাতের আলুর বিদেশে চাহিদা বেশি। জেলা থেকে প্রায় ৫ টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান আলু ক্রয় করছে।এরইমধ্যে রফতানি করা হয়েছে ৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন আলু রফতানি হয়েছে বলে জানান জেলার কৃষি কর্মকর্তারা।

বগুড়া জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি আলু রফতানি করে মেসার্স সাগর ট্রেডার্স। সাগর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শিবগঞ্জ উপজেলার সাগর হোসেন বিভিন্ন দেশে ২০০৮ সাল থেকে মাশওয়া এগ্রো লিমিটেডের মাধ্যমে আলু রফতানি করে আসছেন। এ বছর তিনি বাররুন এগ্রো লিমিটেড এবং এমকেএম ট্রেডার্সের মাধ্যমে আলু রফতারি করেন। সাগর হোসেন এ পর্যন্ত ৭ হাজার মেট্রিকটন আলু পাঠিয়েছেন শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার জানান, গত মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টন আলু বগুড়া থেকে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। করোনার কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না হলেও সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠছে বগুড়ার কৃষি। এ বছর ১১ হাজার মেট্রিকটন আলু রফতানির লক্ষ্য নিয়ে এরই মধ্যে ৮ হাজার মেট্রিকটন আলু পাঠিয়েছে বগুড়ার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ।মুজাহিদ সরকার জানান, লক্ষ্যমাত্রার অধের্ক পাঠানো হয় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে। বাকি অর্ধেক পাঠানো হয় সারাবছরে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, ৭ টি দেশে আলু রফতানি করা হচ্ছে। এবছর ১১ হাজার ২০০ মেট্রিকটন আলু রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার মেট্রিকটন আলু সরকারিভাবে পাঠানো হবে। বাকি আলু প্রতিমাসে ৩ হাজার মেট্রিকটন করে বেসরকারিভাবে পাঠানো হবে।বগুড়ায় আলুর বাম্পার ফলনবঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২০ জয়ী বগুড়ার আলু চাষি, ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ আঞ্চলিক কৃষক প্রতিনিধির নেতা মো. আজমল হোসেন সারাদেশে আলু সরবরাহের পাশাপাশি ২০০৮ সাল থেকে বিদেশে আলু পাঠাতে শুরু করেন ঢাকার কাজী মুন্নী রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

আজমল হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে একটু একটু করে বগুড়ার সবজি বিদেশে রফতানি শুরু হয় প্রায় ১২ বছর আগে। এরপর আস্তে আস্তে এ পরিমাণ বাড়তে থাকলেও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং রফতানি করা পণ্যের কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে বগুড়া থেকে গত বছর আলুসহ ১১-১২ হাজার মেট্রিক টন সবজি দেশের বাইরে গেছে। এবার সবজির পরিমাণ ২০ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।কৃষির উন্নয়নে তিনি বগুড়ার কৃষকদের বিষমুক্ত আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকারি প্রশিক্ষণ প্রদানের কথা বলেন। আর কৃষিকাজে প্রণোদনা এবং ব্যবসায়ী ঋণ সুবিধা পেলে এ ব্যবসার প্রসার ঘটবে বলেন, সাগর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাগর হোসেন।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাশওয়া গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আরিফ আজাদ প্রিন্স বলেন, কয়েক বছর ধরে বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আলু রফতানি করা হচ্ছে। বাছাই করা আলু যাচ্ছে বিদেশে। আমাদের ক্রেতা মূলত প্রবাসীরা। ইউরোপীয় আলুর তুলনায় এদেশের আলুতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় নেটিভ (স্থানীয়) বাজার ধরতে সময় লাগছে বাংলাদেশের আলুর।শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাংবাদিককে বলেন, অন্যান্য বছর কৃষকেরা আমাদের না জানিয়ে সবজি দেশের বাইরে নিয়েছেন বলে আগের কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে এবার আমরা প্রত্যয়ন দিচ্ছি। আর নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য উপজেলার একটি ইউনিয়নে ৫০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password