আন্দোলন-সংগ্রামেই জাতির সব অর্জন: প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলন-সংগ্রামেই জাতির সব অর্জন: প্রধানমন্ত্রী

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভাষার পথ ধরেই অর্জিত স্বাধীনতার কথা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, আমাদের জীবনের প্রত্যেক স্তরেই কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রাম করেই অর্জন করতে হয়েছে। সবকিছুই বহুমূল্যে বাঙালীকে অর্জন করতে হয়েছে। কেউ আমাদেরকে সেধে কিছু দেয়নি, কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। আর ১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষাভিত্তিক আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ভাষার অধিকার এবং স্বাধীনতাসহ সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে।

শনিবার গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মাতৃভাষার জন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতির পিতা যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, তার মধ্য দিয়েই রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ

 একুশের পথ বেয়েই আমাদের রক্তস্নাত স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব অর্জন। তাই বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে একুশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমরা বাঙালী। বাংলা আমার দেশ। এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সঙ্গে চলবে; কারো কাছে হাত পেতে নয়। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলব।

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ- বাঙালীর সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, পাকিস্তানী শাসকরা যখন আমাদের ওপর একটি বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল তখন ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে করাচীতে একটি শিক্ষা সম্মেলন হয়। সেখানেই ঘোষণা করা হয়েছিল উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু উর্র্দু কোন মাতৃভাষা নয়, আর পাকিস্তান নামক যে দেশটি হয়েছিল, তার জনসংখ্যার ৫৬ ভাগের বেশিই আমরা বাঙালী।

তিনি বলেন, আমাদের ভাষা বাংলা। কিন্তু সেই বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে বিজাতীয় ভাষা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পাকিস্তানীরা আমাদের ওপর একটি বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী একুশে পদকপ্রাপ্তদের উদ্দেশে বলেন, আজকে অমর ভাষা দিবসের যে স্বীকৃতি আপনারা পেয়েছেন তা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্যই পেয়েছেন। কাজেই আপনাদের কাছ থেকেই আগামী প্রজন্ম অনেক শিক্ষা নিতে পারবে। পুরস্কার দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, গবেষণা, সংস্কৃতি চর্চা ও সমাজসেবাসহ বিভিন্ন কাজে অবদানের জন্যই এই সম্মাননা। আমি মনে করি, এটা শুধু আপনাদের সম্মাননা নয়, জাতির জন্য সম্মাননা, দেশের মানুষের জন্য সম্মাননা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ রাজধানীর ওসামানী স্মৃৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২১ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও পরিবারের হাতে একুশে পদক হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। জাতীয় ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ বিশিষ্ট নাগরিককে এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন এবং পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ বদরুল আরেফীন স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং সংসদ সদস্যবৃন্দ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব, কবি, সাহিত্যিক, লেখকসহ বুদ্ধিজীবীবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

একুশে পদক বিজয়ীরা নিজ নিজ পদক গ্রহণ করেন এবং মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাঁদের পুত্র-কন্যা এবং পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করেন। মরহুম জননেতা শামসুল হকের পক্ষে তাঁর পুত্র গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা ইসাবেলার (মরণোত্তর) পক্ষে তাঁর পুত্র পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এই পদক গ্রহণ করেন। অন্যদিকে গোলাম মুরশিদের পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর এক ছাত্র। পুরস্কার হিসেবে স্বর্ণপদক, সনদপত্র এবং নগদ অর্থের চেক প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা রক্ত দিয়ে শুধু মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা নয়, স্বাধীনতা অর্জনের পথ করে দিয়েছিল আমরা তাঁদের প্রতি সম্মান জানাই। প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে বন্দী দশার সৃষ্টি করেছে। সেকারণে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারার আপসোস প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমরা কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা অর্জনটাই ছিল আমাদের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা স্তরে যা কিছু অর্জন তা কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রাম করেই করতে হয়েছে। একটি জাতিকে যদি ক্ষতিগ্রস্ত করতে হয় বা তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে হয় তাহলে তার ভাষা-সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে হয়; পাকিস্তানীরা সে চেষ্টাই চালিয়ে গিয়েছিল আমাদের ওপর।

মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, ঘোষণটা পূর্ববঙ্গে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায়। তখনকার যিনি মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীও বলা হতো, তার বাড়ির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসে। এরপর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ নামের সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তারই প্রস্তাবে এই ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু মূলত আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। কারণ, যারা আমাদের ভাষার ওপর আঘাত করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই তিনি প্রতিবাদ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন এবং প্রথম তিনি তমদ্দুন মজলিসসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সকলকে নিয়ে একটা সভা করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা হবে। আরও সিদ্ধান্ত হয়, একটা তারিখ ঘোষণা করে আন্দোলন শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ভাষা আন্দোলন এবং জাতির পিতার ভূমিকার কথা জানার জন্য পাকিস্তানী ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত ‘সিক্রেটস অব ডকুমেন্টস শেখ মুজিব’ খণ্ডগুলো পড়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এ সময় ভাষা শহীদ রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ সকলের আত্মদানের কথা স্মরণ করে বলেন, এই রক্ত দিয়েই রক্তের অক্ষরে নিজের মাতৃভাষায় আমরা কথা বলতে চাই। মাকে মা বলে ডাকতে চাই। সেই কথাটাই তারা লিখে গেছেন। তারপরও কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হয়নি। অর্থাৎ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি হবার পর তার কোন সংবিধানই উপহার দিতে পারেনি, সংবিধান তৈরিই করতে পারেনি।

তিনি বলেন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের যে ঘোষণা, সেখানেও কিন্তু এই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মযার্দা দেয়ার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু সে সরকার বেশিদিন টেকেনি। এরপর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম যে শাসনতন্ত্র রচনা করে সেখানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়।উর্দু দেয়া হয়েছিল পাকিস্তানীদের জন্য আর বাংলা দেয়া হয়েছিল আমাদের জন্য। তিনি বলেন, সেই সঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ঘোষণা করা হয়। শহীদ মিনার তৈরি করার একটা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, বাজেটে অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়, নির্মাণ কাজও শুরু হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ জারি হয়। কাজেই এটা আর সেভাবে অগ্রসর হতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের একটি লাইন উদ্ধৃত করেন। ওই বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন- ১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠারও।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্যের সারমর্ম তুলে ধরে বলেন, আপনারা এই কথাগুলোর মধ্যে পাবেন রাজনৈতিক অধিকার মানে এটা আমাদের স্বাধীনতাকেই বোঝায়। স্বাধীনতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে বাঙালী জাতি হিসেবে আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের কথাই তিনি বলেছিলেন। কাজেই বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন থেকেই কিন্তু একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যান। আর সে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মাকে ‘মা’ বলে ডাকার অধিকার পাই, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির গৌরবময় অধ্যায়ের কথাও স্মরণ করেন। এ স্বীকৃতি নেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সরকার এবং কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালী- রফিক ও সালামের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কানাডা প্রবাসী রফিক এবং সালাম নামে দুই বাংলাদেশীসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কয়েক সদস্য মিলে ‘মাতৃভাষা সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব প্রেরণ করে। যেহেতু জাতিসংঘ ব্যক্তি প্রস্তাব আমলে নেয় না, তাঁরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি ইউনেস্কোতে প্রেরণ করার পরামর্শ দেয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, তখন আমাদের হাতে সময় ছিল না, আমরা মাতৃভাষা সংরক্ষণ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর দ্রুত ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে ইউনেস্কোয় আমাদের প্রস্তাব প্রেরণ করি। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে তারাও (জাতিসংঘভুক্ত সকল দেশ) একসঙ্গে দিবসটি উদযাপন করে আসছে। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের।

প্রধানমন্ত্রী করোনাকালে সকলকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেহেতু করোনাভাইরাস, আমরা ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছি, ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি, যাতে মানুষ সুরক্ষিত হয় তার জন্য। কিন্তু তারপরও এটার ওপর এখনও গবেষণা চলছে। সেই কারণে সবাইকে অনুরোধ, আপনারা দয়া করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মটা মেনে চলবেন। প্রধানমন্ত্রী একুশের চেতনায় অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আমরা বাঙালী। বাংলা আমাদের ভাষা। এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। সম্মানের সঙ্গে চলবে। কারো কাছে হাত পেতে নয়। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলব।

মহান একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, এটা শুধু আপনাদের সম্মাননা নয়, এটা জাতির জন্য সম্মাননা, দেশের মানুষের জন্য সম্মাননা। যারা দেশের, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদেরকেই এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে। আজকে ভাষা দিবসে আপনারা যে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্যই পুরস্কার পেয়েছেন। যারা রক্ত দিয়ে শুধু মাতৃভাষায় কথা বলা নয়, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ তৈরি করে দিয়েছিল। আমরা তাদের প্রতি সম্মান জানাই এবং আপনারা আজকে সেই আমাদের ভাষা শহীদ এবং ভাষা সৈনিকদের নামে পুরস্কার পেয়েছেন।

এজন্য প্রধানমন্ত্রী সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিশেষ অবদান রেখে আজকে এই বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন- আপনাদের কাছ থেকে আগামী প্রজন্ম অনেক শিক্ষা নিতে পারবে। কারণ, এই পুরস্কার দেশের শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান গবেষণা, সংস্কৃতি চর্চা, সমাজ সেবা বিভিন্ন কাজে যারা বিভিন্ন অবদান রেখে যাচ্ছেন তাঁদেরকেই এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, এটা শুধু আপনাদের সম্মাননা নয়, এটা জাতির জন্য সম্মাননা। আগে অল্প কয়েকজনকে দেয়া হতো। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- এটা যেহেতু ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা ২১ জনকেই সম্মাননা দেব। কাজেই সেই ২১ জনকেই এখন থেকে আমরা সম্মাননা দিচ্ছি।

যাঁরা এবার একুশে পদক পেলেন ॥ এ বছর ভাষা আন্দোলনে তিনজন, মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে তিনজন, শিল্পকলায় সাতজন, ভাষা ও সাহিত্যে তিনজন, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, গবেষণা ও অর্থনীতিতে একজন করে মোট ২১ জনকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য এবার মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন- মোতাহার হোসেন তালুকদার (মোতাহার মাস্টার), শামছুল হক ও এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন আহমেদ।

শিল্পকলায় পদক পেয়েছেন- কণ্ঠশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, সালমা বেগম সুজাতা (সুজাতা আজিম), আহমেদ ইকবাল হায়দার (নাটক), সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী (চলচ্চিত্র), ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় (আবৃত্তি), পাভেল রহমান (আলোকচিত্র)। মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন গোলাম হাসনায়েন, ফজলুর রহমান খান ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর) ।

সাংবাদিকতায় অজয় দাশগুপ্ত, গবেষণায় অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় বেগম মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে ড. মীর্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান, ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কবি কাজী রোজী, বুলবুল চৌধুরী ও গোলাম মুরশিদ পদক পেয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে স্বর্ণ পদক, সনদপত্র এবং চার লাখ টাকার নগদ অর্থের চেক প্রদান করা হয়। এবারের ২১ জনসহ এযাবত মোট ৫২০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ৩টি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে। আর ২০১৮ সাল থেকে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১-এ উন্নীত করা হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password