তারুণ্যেই শক্তি, তারুণ্যেই মুক্তি

তারুণ্যেই শক্তি, তারুণ্যেই মুক্তি

ইতিহাস বারবার এগিয়ে আসে তরুণদের অবদানকে স্মরণ করিয়ে দিতে। বলা হয়ে থাকে তারুণ্যের চোখ দিয়ে বিশ্বকে জয় করার সম্ভব। 

একজনের রক্তের জবাবে বুক পেতে তাজা রক্ত বিলিয়ে দেওয়ার সমৃদ্ধ, সাহস এবং শানিত ইতিহাস এই বাংলার ইতিহাসে আছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, '৫২-এর ভাষা আন্দোলন,৬৬- এর গণঅভ্যুত্থান,  একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের তরুণদের সাহসী এবং আত্মত্যাগের মহিমা বাঙালির প্রেরণার হাতিয়ার।

২০১৩-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল দেশের সরকারি খাতে চাকরি সংক্রান্ত সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন। প্রথমে শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মূল প্রতিবাদ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং একই ধরনের দাবি নিয়ে তাদের নিজস্ব মিছিল বের করে। এটি ২০১৩ সালে ঢাকার শাহবাগের বিক্ষোভের সামসময়িক একটি আন্দোলন, যেটি প্রায় একই সময়ে একই স্থানে হয়েছিলো। ২০১৩ সালের কোটা আন্দোলন সফলতার মুখ না দেখলেও এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশে পুনরায় কোটা নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলন সংগঠিত হয়।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশজুড়ে চলছিল স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের সুদীর্ঘ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চুম্বক দিকগুলো কী ছিল? এ আন্দোলন দেশের কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতার বিষয়টি কীভাবে সামনে নিয়ে আসে?

বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিকেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতির পুরোপুরি বাইরে থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনটি শুরু হয়। এমন ব্যতিক্রম ধারার শিক্ষার্থী আন্দোলন অবশ্য বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সেনা ক্যাম্প উঠিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেন, যা পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন এবং রানা প্লাজা ধসের পরবর্তী সময়ে শ্রমিকদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের পেছনে শিক্ষার্থীরা ছিলেন অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা ২০২১ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ প্রমাণ করে যে আমাদের কিশোর-তরুণদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যথেষ্ট গভীর এবং প্রয়োজন পড়লে দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নামতেও তাঁরা প্রস্তুত।

২০১৮ এরপর আমরা দেখি ২০২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রতিটি আন্দোলনেই বারবার ফিরে এসেছে তারুণ্য শক্তির মাধ্যমে। ২০২৪ এর আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কারে আটকে থাকে নি বরং শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল  স্বৈরাচার সরকারের পতন।'৯০-এর মতোই এবারও তরুণ শক্তির  সফলতার জয় হয়েছে।

আজকের তরুণ আগামী দিনের ভবিষ্যত্। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তারুণ্যের মধ্যেই সর্বদা লুকায়িত সব বাধা-বিপত্তি, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার উজ্জীবিত শক্তি। বৃদ্ধের প্রজ্ঞা, পরামর্শ আর তারুণ্যের শক্তি একটি জাতির সমৃদ্ধি অর্জনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে থাকে। তাই বলা হয়, ‘তারুণ্যেই শক্তি, তারুণ্যেই মুক্তি’। পৃথিবীর যত মহত্কর্ম  সাধিত হয়েছে, মুক্তির উদ্যম হাওয়া যত প্রান্তর বেয়ে প্রবাহিত হয়েছে তার প্রত্যেকটির পেছনে অসামান্য অবদান রয়েছে তরুণদের। আর এই তারুণ্যের শক্তির  আশ্রয়ে পৃথিবীকে বদলে দিতে চাই তরুণদের সঠিক পথে চালিত করার দিকনির্দেশনা। তরুণদের শুভ শক্তির দ্যুতি ছড়িয়ে মহত্ত্ব এক পৃথিবীর জন্ম ঘটাতে তরুণদের চালিত করতে হবে আলোর পথে, মুক্তির পথে।

উন্নত দেশ গড়ার জন্য তরুণদের নিয়ে  অবহেলার সুযোগ নেই। তরুণদের মেধা ও প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এ দুইয়ের সমন্বয়ে যাবতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নেও যথাযথ মনোযোগ প্রয়োজন। তরুণদের সুপথে পরিচালনা না করতে পারলে তাদের বিপথে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে তরুণদের বিকাশে দেশের সামগ্রিক উন্নতির রূপরেখা ঢেলে সাজাতে হবে। তরুণরা কেন বিদেশে যেতে চাচ্ছেন এ বিষয়ে প্রয়োজনে আরো গবেষণা হওয়া উচিত। যেহেতু তরুণদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত রয়েছে, সে হিসেবে তরুণরা যেন দেশ গড়ায় আগ্রহী হন, সে স্বপ্নের বীজ তরুণদের মধ্যে বুনে দেয়া দরকার। আর সে স্বপ্ন যেন ডালপালা গজায়, সম্ভাবনার অসীম আকাশে বিরামহীন বিস্তৃত ডানায় ভর করে তরুণদের নেতৃত্বের জয়গান গায়, সেটিই এখন নিশ্চিত করা উচিত।

আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণরা অনেক সম্ভাবনাময়। দেশের তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশ ধাপে ধাপে আরো উন্নতির পথে অগ্রসর হবে। এজন্য তরুণদের মেধার যথাযথ মূল্যায়ন প্রয়োজন। আগামীতে জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়তে তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে সামনে এগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে কর্মসংস্থানের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করুক, তরুণরা অর্জিত জ্ঞান সমাজে প্রয়োগের অনুপ্রেরণা পাক, সমৃদ্ধি ও উন্নতির পথে তরুণরা আরো ভূমিকা রাখুক, সেটিই আমাদের কাম্য।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password