পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা ঋণ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে যান লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কাঠের কফিনে বন্দী প্রাণহীন দেহ নিয়ে দেশে ফেরেন অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক।
পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে লাশ হয়ে ফেরায় চোখ ভিজে কান্নাও এসেছে কোনো কোনো পরিবারের। পরিবারের একমাত্র উপার্যনের ব্যক্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেক পরিবার। এই যেমন গত বছরের শুরুতে সৌদি আরবে যান জলিল শেখ। পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করে, পরিবারে সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে যান তিনি। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সম্প্রতি কাঠের কফিনে বন্দি জলিলের প্রাণহীন দেহ ফেরে দেশে ।
কীভাবে জলিলের মৃত্যু হয়েছে তা স্পষ্ট নয় পরিবারের কাছে। মৃত্যু সনদে উল্লেখ করা তথ্যের বাইরে আর কোনো তথ্য জানেন না তার স্বজনরা। কফিনের গায়ে লাগিয়ে রাখা ছোট্ট একটা কাগজে লেখা, ‘মৃত্যুর কারণ স্বাভাবিক। ময়নাতদন্ত করতে চাওয়া হয়নি। ক্ষতিপূরণের দাবি নেই।
জলিলের স্ত্রী খাদিজা সৌদি আরবে থাকা সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা গেছেন তার স্বামী। ময়নাতদন্ত না করায় স্বজনরা জানতে পারছে না, তরুণ বয়সে হঠাৎ তাদের মৃত্যুর কারণ কী। সৌদি আরব থেকে কোনো ক্ষতিপূরণও পায় না স্বজনরা। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ আর স্বামীর পাঁচ লাখ টাকা ঋণের দায়ভার এখন তার কাঁধে। সব হারিয়ে নিঃস্ব খাদিজা অন্ধকার দেখছেন চোখে।
শুধু জলিল নয়, প্রতিদিনই গড়ে গড়ে ১০ থেকে ১২ জন প্রবাসীর মৃতদেহ আসছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমতে, গত ১৪ বছরে সৌদি আরবে কমপক্ষে ১৩ হাজার ৬৮৫ বাংলাদেশি কর্মী মারা গেছেন। এর মধ্যে ২০২২ সালেই মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৫০২ জনের। প্রতিদিন গড়ে চারজনের বেশি বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে শুধু সৌদিতেই।
বিশ্বে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি কাজ করলেও ৭৫ ভাগ শ্রমিক কাজ করে মধ্যপ্রাচ্যে। যার মধ্যে ২০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করে সৌদি আরবে। আর সবচে বেশি মৃতদেহ আসে সৌদি আরব থেকে। যখন জীবন সাজানোর সময় সেই মধ্য বয়সেই সৌদি প্রবাসীর জীবন ধমকে যাচ্ছে, কিন্তু কেন?
মরুর দেশে এমনিতেই প্রচণ্ড গরম তারপরে কাজের পরিবেশ না থাকায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ে ফলে বাড়ছে স্ট্রোকের ঘটনা। তাছাড়া অমানবিক পরিশ্রমের কারণেও মৃত্যু বাড়ছে বলে মনে করেন এই অভিবাসন বিশেষজ্ঞ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন