ঐতিহ্যবাহী ‘ভেলা ভাসানি’ সম্প্রীতির মিলনমেলা

ঐতিহ্যবাহী ‘ভেলা ভাসানি’ সম্প্রীতির মিলনমেলা

প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানিগঞ্জ সহ আশেপাশের কিছু অঞ্চলে পালিত হয় ‘ভেলা ভাসানি’ নামে এক দারুণ উৎসব। এটি শুধু একটি উৎসব নয়, এটি গ্রামীণ ঐক্য আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে এই উৎসবের সবচেয়ে মজার দিক হলো বিশেষ ধরনের ভেলা বানানো। সাত বা পাঁচটি কলা গাছের টুকরা দিয়ে প্রথমে এর কাঠামো তৈরি করা হয়। এরপর বাঁশ, কাগজের টুকরা আর রঙিন কাগজ বা কাপড় দিয়ে এর ওপর তৈরি হয় ছোট একটি ঘরের মতো দেখতে কাঠামো। ভেলাটিকে সাজানো হয় মোমবাতি, আগরবাতি, ফল আর শিন্নি (মিষ্টি প্রসাদ) দিয়ে।

ভেলা ভাসানি উৎসবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই তাদের মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য বিভিন্ন মানত করে। কেউ মুরগি, কেউ শিন্নি বা ফল, আবার কেউ টাকা-পয়সা নিয়ে আসে। এসবের কিছু অংশ ভেলায় উৎসর্গ করা হয়। দিনভর চলে আধ্যাত্মিক গানের আসর। ঢোলক, একতারা, দোতারা আর সারিন্দার সুরে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। উৎসবকে ঘিরে বসে গ্রামীণ মেলা, যেখানে মানুষের ভিড় জমে ওঠে।

সবকিছু উৎসর্গ করার পর বাকি প্রসাদ সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। দিনের শেষে, রাতে বা ভোরে এই সাজানো ভেলাটি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রথা বংশপরম্পরায় চলে আসছে। দোহারের জামালচর গ্রামের পলাশ ফকির যেমন বলেন, তাঁর দাদা সুরত খাঁ ও বাবা ফুলচান ফকির এই উৎসবের আয়োজন করতেন, আর তিনি সেই ধারা এখনো বজায় রেখেছেন।

এভাবেই ‘ভেলা ভাসানি’ উৎসব গ্রাম বাংলার বুকে আজও সজীব ও প্রাণবন্ত রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password