আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নওগাঁর মান্দায় প্রতীক পেয়ে প্রচারণায় নেমেছেন চেয়ারম্যান এবং সদস্য পদের প্রার্থীরা। এই উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন দলটির বর্তমান ও সাবেক ২২ জন নেতা-কর্মী
এসব বিদ্রোহীদের কারনে বেশ কিয়দায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। অন্যদিকে বিএনপি এবং জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রের মোড়কে দলীয় নেতারা বিভিন্ন ইউনিয়নে নেমেছেন প্রতিদ্বদ্বীতায়। আ’লীগের বিদ্রোহীদের পাশাপাশি বিএনপি(স্বতন্ত্র) এবং জামায়াত’র (স্বতন্ত্র) প্রার্থীরাও জয় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেআ’লীগ মনোনীত প্রার্থীদের। আ’লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর অবস্থান ভালো। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কয়েকটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।
১৪টি ইউপিতে মোট ৯৪ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মান্দা সদর ইউপিতে আ’লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন (তোফা)। তাঁর বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোতাহার হোসেন ও যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন। মান্দা সদরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, আ’লীগের প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপির নেতা মাজেদুর রহমান মিঠু ও জামায়াতের নেতা তোফাজ্জল হোসেনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা।
প্রসাদপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত নির্বাচনে আ’লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন সরদার। এবারও তিনি আ’লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রসাদপুরে আ’লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের কারনে বিএনপির নেতা আবদুল মতিন মণ্ডল, বর্তমান চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন খাঁন এবং জামায়াত নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
ভারশোঁ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারশোঁ ইউপি নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, স্বতন্ত্র হিসেবে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আলতাজ উদ্দিন ও বিএনপির নেতা মোজ্জাম্মেল হকের মধ্যে।
ভালাইন ইউপিতে আ’লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইব্রাহিম হোসেন বাবু। তাঁর বিপরীতে এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা মণ্ডল ও ইউনিয়ন আ’লীগের সদস্য শরিফুল ইসলাম। দল মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে দুজন আ’লীগ নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এখানে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম।
মৈনম ইউপিতে আ’লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সামন্ত কুমার সরকার। তাঁর বিপরীতে সাবেক আ’লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী রাজা ও ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বর্তমান চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী রাজা ও আনিছুর রহমানের মধ্যে।
কালিকাপুর ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আ’লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হযেছেন আ’লীগ নেতা মো. হায়দার আলী প্রামানিক। এছাড়াও সাবেক দুই চেয়ারম্যান মোহসীন আলী মাস্টার ও আশরাফুল ইসলাম বাবু এবং বিএনপি নেতা এ্যাড. রফিকুল ইসলামসহ এখানে মোট প্রার্থী ৫ জন। পরানপুরে আ’লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান উজ্জলের বিদ্রোহী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল গাফ্ফার। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান ইলিয়াস খাঁন এবং সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন মোল্যার ত্রিমূখী লড়াই হবে বলে ভোটারদের ধারনা। তেঁতুলিয়া ইউপিতে আ’লীগের প্রার্থী গাজিবুর রহমানের বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন কার্তিক চন্দ্র। বিষ্ণুপুর ইউপিতে আ’লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম বিপাকে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম আজমকে নিয়ে।একই অবস্থা নুরুল্যাবাদ,কাঁশোপাড়া এবং কশব ইউনিয়নেও। আলী’গের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই গনেশপুর ইউপিতে।
গনেশপুর ইউপিতে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হানিফ উদ্দিন মন্ডলের সাথে সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বাবুলের হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে ভোটারদের ধারনা। মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন মণ্ডল বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা কেন্দ্র ও জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে যে নির্দেশনা আসবে, তা-ই বাস্তবায়ন করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন