সন্তানের আশায় অনেক দম্পতিকেই উদ্বিগ্ন দেখি আমরা। অনেককে শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়। সন্তান না হওয়ার দায়টা আমাদের সমাজে নারীর ওপরই বর্তায়। তবে এতে পুরুষ সঙ্গীর ভূমিকাও অনেক সময় প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষদের সমস্যার কারণে সন্তান হয় না।
পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন শুক্রাণু তৈরি না করতে পারা। বর্তমানে নারীদের পাশাপাশি পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা অনেকাংশে বেড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নিয়ম না মানাসহ বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা বাড়ছে। যেমন- মদপান, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলা না করা, খাবারে ভেজাল।
পরিসংখ্যান বলছে, বিগত ৪০ বছরে বিশ্বে পুরুষদের শুক্রাণুর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এই বাস্তবতা প্রত্যেককে, বিশেষ করে পুরুষদের ভয় পাওয়া উচিত। তবে ঠিক কি কারণে এমনটা ঘটছে, তা নিয়ে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে, দৈনন্দিন জীবনচর্চা ও খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কা।
--দেখে নিন, কি কি খাবার খেলে বেড়ে যেতে পারে এই আশঙ্কা--
--সম্পৃক্ত ফ্যাটিঅ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার-- ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড বা ক্ষতিকর ফ্যাটি অ্যাসিডকে এমনিতেই হৃদযন্ত্রের সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দেখা হয়। বর্তমান গবেষণা বলছে, এই ধরনের পদার্থ শুক্রাণুর সমস্যার জন্যেও দায়ী। ট্রান্স ফ্যাট ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার শুক্রাণু উৎপাদনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে। পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটিঅ্যাসিড অণ্ডকোষে জমা হতে পারে। বীর্যে এই ধরনের স্নেহ পদার্থের উপস্থিতি শুক্রাণুর স্বাস্থ্যহানি ঘটাতে পারে। কমাতে পারে শুক্রাণুর ঘনত্বও।
--প্রসেসড মিট-- বিশেষজ্ঞদের মতে প্রক্রিয়াজাত মাংস শুক্রাণুর পরিমাণ হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। বেকন, সালামি থেকে হটডগ, বার্গার- যে যে খাদ্যে এই ধরনের মাংস ব্যবহৃত হয় তাদের উপর করা একটি সমীক্ষা স্পষ্ট জানিয়েছে এই তথ্য। তাদের কথায়, এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত মাংস স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমনকি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত এই ধরনের মাংস খাওয়ার কারণে স্পার্মের সংখ্যা কমে যায়। এছাড়াও স্পার্ম ঠিকমতো চলাফেরা করতেও পারে না।
--অতিরিক্ত স্নেহজাতীয় পদার্থযুক্ত দুগ্ধজাত পদার্থ-- বর্তমানে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবাদি পশুদের স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। এর প্রভাব পরে দুধেও। এই ধরনের গবাদি পশুর দুধে স্নেহজাতীয় পদার্থ থাকে অনেক বেশি। সম্প্রতি ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী যুবকদের উপর করা একটি সমীক্ষা বলছে, এই ধরনের দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য খেলে শুক্রাণুর চলাচল, গতি ও আকৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
--ধূমপান ও মদপান-- একাধিক গবেষণা বলছে, গাজা ও সিগারেট শুক্রাণুর সমস্যা ডেকে আনতে পারে। মাঝেমধ্যে মদপান করলে খুব একটা অসুবিধা না হলেও নিয়মিত অতিরিক্ত মদপান শুক্রাণুর গঠনগত বিকৃতি ঘটাতে পারে। এজন্য মদের মতো বিষাক্ত পানীয় নিয়মিত মুখে তোলার অভ্যাস থাকলে এবার ছাড়তে হবে।
নইলে যে বাবা হওয়ার ইচ্ছে কোনওদিনও পূরণ হবে না। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত মদ্যপান করলে স্পার্ম কাউন্ট কমে যাওয়া এবং ঘনিষ্ঠতায় অনীহাসহ একাধিক সমস্যার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যেন তেন প্রকারেণ মদ্যপানে ফুলস্টপ দিন। এতেই আপনার সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।
--সয়া পণ্য-- সয়া পণ্যগুলিতে ফাইটোয়েস্ট্রোজেন রয়েছে - ইস্ট্রোজেনের মতো যৌগ যা উদ্ভিদ থেকে আসে। বোস্টনের একটি ফেরটিলিটি ক্লিনিক থেকে ৯৯ জন পুরুষের একটি সমীক্ষা থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, অতিরিক্ত সয়া গ্রহণ শুক্রাণুর ঘনত্ব হ্রাস করতে পারে।
--অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ-- শুধু খাদ্য নয়, বর্তমানে উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য সংরক্ষণের জন্য যে ধরনের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয় সেগুলিও শুক্রাণুর সমস্যার জন্য মারাত্মক ভাবে দায়ী। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হল, অধিকাংশ খাদ্যেই এই ধরনের রাসায়নিক মিশে থাকে যা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। সবজি ও ফলে যে কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, অথবা প্রসেসড ফুডে এ ধরনের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গবেষণা বলছে, সয়াতে থাকা ফাইটোস্ট্রোজেনগুলির মতো, জেনোস্ট্রোজেন (যা এই ধরনের রাসায়নিকে থাকে) শুক্রাণুর ঘনত্বকে ধ্বংস করতে পারে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন