গরুর মাংস সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে প্রতি কেজি ৬০০ টাকা বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হলেও কিছু বিক্রেতা সেই নির্দেশনা মানছেন না ।
ভোক্তা অধিকারের মতবিনিময় সভায় বেশী দামে গরুর মাংস বিক্রি করা ব্যবসায়ী আর খামারীদের তোপের মুখে পড়লেন অল্প লাভে কম দামে মাংস বিক্রি করা ব্যবসায়ী। ভোক্তা অধিকার মহাপরিচালক সাফ জানান প্রতি কেজির দর হওয়া উচিৎ ৫০০ টাকা। এক ও অভিন্ন দাম ঠিক করতে ব্যবসায়ী আর খামারীদেরই দায়িত্ব দেন তিনি।
কম দামে মাংস বিক্রি করায় বাকি ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন শাহজাহানপুরের খলিল আহমেদ ও মিরপুরের উজ্জল। আজ রোববার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অন্য মাংস বিক্রেতারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে কম লাভে মাংস বিক্রি করায় মাংস বিক্রেতাদের ও প্রিন্স বাজারকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, ‘খলিল এত দিন মাংস বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লাভ করেছে। দেখি সে কত দিন কম দামে মাংস দিতে পারে!’
সেমিনারে খলিল আহমেদ জানান, মাংসের দাম বাড়ায় তিনি আগে দিনে দুই-তিনটি গরু জবাই করতেন। দাম কমিয়ে বিক্রি করায় এখন দিনে ৩০-৩২টি গরু জবাই করছেন। প্রতি কেজি মাংস তিনি ৫৯৫ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতিটি গরুতে পাঁচ-সাত মণ মাংস হচ্ছে। খলিল আরও বলেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় তাঁর লাভও কমে গিয়েছিল।
এখন দাম কমিয়ে বিক্রি করায় তাঁর লাভ আগের মতোই হচ্ছে। শাহজাহানপুরের খলিল ৫৯৫ টাকা ও মিরপুরের উজ্জল ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করায় অন্যান্য বাজারে বিক্রি অনেক কমে গেছে। খলিলের দোকানে লাইন ধরে লোকজন মাংস কিনছেন। কম দামে মাংস বিক্রি করায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খলিল আহমেদকে ফুলের মালা দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
সভায় খলিল কম দামে মাংস বিক্রি করায় সেমিনার কক্ষে মাংস ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় হইচই করেন। ভোক্তা-অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁদের বারবার থামানোর চেষ্টা করেন। সভায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল তাঁর বক্তব্যে বলেন, খলিলের দোকানের মাংস মানসম্মত ও অন্যান্য দোকানের চেয়ে দামে অনেক কম।
কম দামে বিক্রির বিষয়টি আদৌ সত্যি কি না, সে জন্য তিনি তাঁর একজন সহকর্মীকে দিয়ে মাংস কিনিয়েছিলেন। কয়েক দিন ধরে কম দামে মাংস বিক্রি হওয়ায় ভোক্তারাও খুশি।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, তিনি যত দিন মাংস কিনেছেন। তত দিনই ঠকেছেন। সভায় সিদ্ধান্তের বিষয় উল্লেখ করে পরিচালক বলেন, আগামী বুধবার বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন মাংসের দাম নির্ধারণে সভা করবে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেনের অফিসে বৈঠক হবে। সেখানে ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম নির্ধারণ করে তা ভোক্তা-অধিদপ্তরকে জানাবেন। সেই সঙ্গে মাংস বিক্রি করলে অবশ্যই পাকা রসিদ সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন